যৌন হয়রানির অভিযুক্ত ঢাবি শিক্ষক দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

যৌন হয়রানি, দুর্নীতি, অসদাচরণ ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষককে দিয়েই শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে প্রশিক্ষণ কর্মশালার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যেই আগামীকাল সোমবার এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘কোভিড ১৯ মহামারি: করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের মানসিক বিপর্যয় ও প্রতিকার’ শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে কুবি ‘ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেল’ (আইকিউএসি)।

প্রশিক্ষণের ‘রিসোর্স পার্সন’ বা বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর রহমানকে।

অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২০ জুন দুর্নীতি ও বিভিন্ন অন্যায় কাণ্ডে লিপ্ত থাকাসহ ১২টি অভিযোগ এনে তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ও অভিযোগগুলোর বর্ণনা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাতজন শিক্ষক। বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করে তা তদন্ত ও প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে ঢাবি উপাচার্যের প্রতি অনুরোধ করেছেন তাঁরা।

সবশেষ চলতি মাসের ২৪ তারিখ কামাল উদ্দিনের দুর্নীতি ও অন্যান্য অনিয়ম সিন্ডিকেট কর্তৃক তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে আবারও উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছেন তারা। এর আগে ২০০৮ সালে এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ঢাবি সিন্ডিকেট কর্তৃক প্রমাণিত হলে কামাল উদ্দিনকে এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনের ওপর অনাস্থা প্রস্তাবকারী শিক্ষকদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিম।

এ বিষয়ে তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তাঁদের চিঠিতে উল্লেখিত অভিযোগ ছাড়াও অধ্যাপক কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে একাধিক যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের একজন বিদেশি নারী শিক্ষার্থীর সাথেও একই ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় তাকে সেখানকার অতিথি শিক্ষকের পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এ রকম একজন ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের মানসিকবিষয়ক প্রশিক্ষণের বিশেষজ্ঞ বক্তা হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করছি। 

আরও পড়ুনঃ ছাত্রলীগ নেতার থাপ্পড়ে ফেটেছে কানের পর্দা, চিকিৎসা করাবে রাবি প্রশাসন

অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘এ রকম একজন ব্যক্তি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার নারী শিক্ষার্থীদের সাথেও তার পরিচয় ঘটবে এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দীর ভাষ্য, নৈতিক স্খলনের কারণে যাদের শাস্তি হয়েছে এবং যাদের নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে, এমন ব্যক্তিদেরকে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মানানসই নয়।

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণটির আরেকজন বিশেষজ্ঞ বক্তা হলেন সৈয়দ তানভীর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত সাদা দল থেকে নির্বাচন করেন। সবশেষ ২০২২ সালের নির্বাচনে সাদা দল থেকে সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। শোকের মাস আগস্টে সাদা দলের প্রতিনিধিকে দিয়ে প্রশিক্ষণ করানোর বিষয়টি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানের প্রতি অশ্রদ্ধা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশের সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইদুল আল-আমীন বলেন, এটা অবশ্যই দুঃখজনক। এ সময় (শোকের মাসে) সাদা দলের কাউকে দিয়ে অনুষ্ঠান করা সমীচীন নয়। এ বিষয়ে আমি উপাচার্যের সাথে কথা বলব।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ আরেক অংশের সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকীর বক্তব্য জানতে চাইলে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

আইকিউএসির পরিচালক অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, উপাচার্যকে তাদের (বিশেষজ্ঞ বক্তা) প্রোফাইল দেওয়ার পর তাঁর নির্দেশনার আলোকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অভিযোগগুলোর বিষয়ে তাঁরা জানতেন না। এটা দুঃখজনক। ভবিষ্যতে বিষয়গুলোতে সতর্ক হবেন তাঁরা।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আমন্ত্রিত উভয় বিশেষজ্ঞ বক্তার বাড়ি বরিশালে বিভাগে। আবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের বাড়িও ওই অঞ্চলে। উপাচার্যও বেড়ে উঠেছেন একই এলাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার করতেই বরিশালের লোকেদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংবর্ধিত করছেন তাঁরা। আইকিউএসি পরিচালক অবশ্য এমন বিষয় অস্বীকার করে বলেন, এটিও তিনি জানতেন না।

এসব বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে উপাচার্যের সাথেই আলাপ করতে বলেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence