আন্দোলনের ছায়ায় জন্ম তিতুমীর কলেজ: ৫৮ বছরের বর্ণাঢ্য অভিযাত্রা

  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো সরকারি তিতুমীর কলেজ। রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গত ৫৮ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছে। তবে এর জন্ম হয়েছিল একটি আন্দোলনের ছায়ায়, এক সংগ্রামী প্রেক্ষাপটে।

সময়টা ১৯৬২। তৎকালীন পাকিস্তানের আইয়ুব সরকার কর্তৃক গঠিত হয় হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন। এটি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ, বুদ্ধিজীবী সহ সকল সচেতন মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য ও প্রত্যাখ্যাত হয়। এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনরোষ রাজপথে গড়ায়। গণবিরোধী শিক্ষানীতিটি বাতিল করা এবং সর্বজনীন গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবিতে ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’–এর ছাত্র আন্দোলন ব্যাপক রূপ নেয়। আন্দোলনের এই ঢেউ তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ লাগে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান সিদ্ধান্ত নিলেন জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি শাখাকে স্থানান্তর করা হবে। এতে আন্দোলনরত ছাত্র সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়বে। 

সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৬৮ সালে ৭ মে মহাখালীর ডিআইটি খাদ্য গুদাম হিসেবে পরিচিত একটি ভবনে জগন্নাথ কলেজের ডিগ্রি শাখাকে স্থানান্তর করে নামকরণ করা হয় জিন্নাহ কলেজ। পাকিস্তানের গভর্নর ও কায়েদে আজম খ্যাত মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নামে এর নামকরণ হয়।

১ মার্চ ১৯৭১ মুক্তির বছর সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি স্থগিত করেন। এমন সংবাদে ছাত্রজনতা ফুঁসে উঠে এবং সমগ্র দেশ গর্জে উঠে। প্রতিবাদস্বরূপ জিন্নাহ কলেজের ছাত্র ও ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জিন্নাহ কলেজের নামের সাইনবোর্ডটি নামিয়ে ফেলে। জিন্নাহ কলেজ শাখার ছাত্র সংসদের প্রথম সহ-সভাপতি (ভিপি) সিরাজউদ্দৌলার নেতৃত্বে টিপু মুনশি ও শাহাবুদ্দিনসহ তৎকালীন কতিপয় ছাত্রনেতা প্রতিক্রিয়া হিসেবে জিন্নাহ্ কলেজের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেন। জিএস আনিসুজ্জামান খোকন জিন্নাহ কলেজের নাম ‘তিতুমীর কলেজ’ প্রস্তাব করেন।

২ মার্চ ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় জড়ো হলে সেখানে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রবের মধ্যস্থতায় জিন্নাহ্ কলেজের নাম ‘তিতুমীর কলেজ’ হিসেবে চূড়ান্ত হয়। ওই রাতেই ‘তিতুমীর কলেজ’ নামকরণের সাইনবোর্ড লেখা হয় এবং দেয়ালে টাঙিয়ে দেয়া হয়। 

তিতুমীরের পরিচয় 

তিতুমীরের প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী (২৭শে জানুয়ারি ১৭৮২-১৯শে নভেম্বর ১৮৩১)। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তিনি বাঙ্গালা আমিরাত নামক স্বল্পস্থায়ী রাষ্ট্রের বাদশাহ ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ শাসন ও তাদের অনুগত অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং তার বিখ্যাত বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। ব্রিটিশ সেনাদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় এই বাঁশের কেল্লাতেই তার মৃত্যু হয়।

তিতুমীর কলেজের বর্তমান অবস্থা

প্রতিষ্ঠাকালে তিতুমীর কলেজের শ্রেণিকক্ষ ছিল একটি খাদ্য গুদামের ভবনে, যেখানে শুধুমাত্র উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির পাঠদান হতো। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিজ্ঞান অনুষদ, বাণিজ্য অনুষদ এবং কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত প্রায় ২৩টি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

কলেজটিতে বর্তমানে রয়েছে একাধিক একাডেমিক ভবন, খেলার মাঠ, অডিটোরিয়াম, গ্রন্থাগার, মসজিদ, ছাত্র সংসদ, শরীরচর্চা কেন্দ্র, দুটি আইসিটি ল্যাব এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ৯টি বাস। এছাড়াও রয়েছে চারটি আবাসিক হল এবং একটি নির্মাণাধীন হল। শিক্ষার্থীদের মেধা ও সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়তা করতে কলেজটিতে রয়েছে একাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, যা তাদের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন, গীতিকার ও সাংবাদিক রবিউল ইসলাম জীবন, অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ, হাসান মাসুদ, জিয়াউল হক পলাশ, শবনম বুবলীসহ অসংখ্য কৃতি শিক্ষার্থীদের চারণভূমি ছিল ৫৮ বছর বয়সী সরকারি তিতুমীর কলেজ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence