ইবির সেন্ট্রাল ল্যাবে অতিরিক্ত ফি নির্ধারণের অভিযোগ

ইবির সেন্ট্রাল ল্যাব
ইবির সেন্ট্রাল ল্যাব  © টিডিসি ফটো

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের জন্য সেন্ট্রাল ল্যাব ব্যবহারে অতিরিক্ত ফি নির্ধারণের অভিযোগ উঠেছে। সেন্ট্রাল ল্যাব চালুর পর অধিকাংশ সময় অব্যবহৃত পরে থাকার পরে নতুন করে তা চালুর উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। তবে দক্ষ টেকনিশিয়ান ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের আগেই মাত্রাতিরিক্ত ফি নির্ধারণ করে সমালোচনার জন্ম দেয় প্রশাসন। তবে একেবারে অনুমানভিত্তিক বা "আকাশ থেকে পড়া" কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলছেন সেন্ট্রাল ল্যাবের পরিচালক অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম। 

জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ল্যাব দীর্ঘদিন ধরেই নানা সংকটে পরিত্যক্ত স্থান হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছিলো। সম্প্রতি রাতে ল্যাব ব্যবহার নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে নিরাপত্তাকর্মীদের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ এবং প্রশাসনের নির্দেশে রাতে ল্যাব ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সমালোচনার মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে প্রশাসন। তখনি সেন্ট্রাল ল্যাবের দুরবস্থার বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। এরই মধ্যে সেন্ট্রাল ল্যাবের পরিচালকের কার্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের ল্যাব ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফি এর বিষয়টি জানানো হয়। 

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কোন ছাত্র বা শিক্ষককে ল্যাব ব্যবহার করতে হলে একটি স্যাম্পল পরীক্ষা করতে গুনতে হবে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি। এতে এল থার্মো সায়েন্টিফিক গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফি, উচ্চ-ক্ষমতার ক্রোমাটোগ্রাফি (HPLC) এবং কনফোকাল লেজার স্ক্যানিং মাইক্রোস্কোপের প্রতি স্যাম্পলের জন্য ২০০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি রিএজেন্টের জন্য ৫০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত ফি ধার্য হয়েছে। 

দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ল্যাব বা বিশেষায়িত গবেষণা ল্যাবের ফি কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এই টাকা ধার্য করা হয়েছে বললেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্লেষণাত্মক সেবা দেওয়া হলেও ইবিতে নেই সেই সক্ষমতা। শিক্ষার্থীদের মতে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে হলে Teaching, Learning & Innovation এই তিনটি সেক্টরে অগ্রগতি আনতে হবে কিন্তু ইবির উক্ত তিন সেক্টরে অগ্রগতি খুবই কম। ল্যাব প্রতিষ্ঠার সময় যে-সব জিনিসপত্র কেনা হয়েছিল তার অধিকাংশই দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেষ্ট পরিমাণ জনবল থাকলেও ইবিতে সেন্ট্রাল ল্যাবে রয়েছে মাত্র একজন কর্মচারী। ফলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে সহজেই গবেষণার ফলাফল পেয়ে যান, ইবির শিক্ষার্থীরা তা পাবেন না। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার পরে আগামী ৬ মে টেকনিক্যাল কমিটির সভার আগ পর্যন্ত আপাতত ফি নির্ধারণের বিষয়টি স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সেন্ট্রাল ল্যাবের পরিচালক অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম। সেখানে তিনি লিখেছেন, কোনো সমস্যা বা অসুবিধা অনুভব করলে প্রথমে সরাসরি পরিচালক বা ল্যাব ব্যবস্থাপনার সাথে যোগাযোগ করা উচিত। ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেগপ্রবণ মন্তব্য করে সমস্যার সমাধান হয় না; বরং কখনো কখনো এটি অকারণ ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। প্রকৃত সমাধান চাইলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে যুক্তিযুক্ত আলোচনায় আসাই শ্রেয়। 

তিনি বলেন, সম্প্রতি সেন্ট্রাল ল্যাবের নির্ধারিত এনালাইটিক্যাল ল্যাব সার্ভিস ফি নিয়ে কিছু মতামত আমরা পেয়েছি। অনেকে এটিকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন, তবে কোন যুক্তি, তুলনা বা নির্দিষ্ট রেফারেন্সের ভিত্তিতে এ মন্তব্য করা হয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এটি সত্য যে, বর্তমানে দক্ষ টেকনিশিয়ান ও এক্সপার্ট স্টাফের কিছু ঘাটতি রয়েছে, তবে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা চলছে। যদি কোনো সময় রিএজেন্ট সরবরাহে সমস্যার কারণে সেন্ট্রাল ল্যাব থেকে নির্ধারিত রিএজেন্ট সরবরাহ সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে রিএজেন্টের খরচ নির্ধারিত ফি থেকে বাদ দেওয়া হবে। অথবা, গবেষক পূর্বেই পরিচালককে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট রিএজেন্ট ব্যতীত বাকি ফি প্রদান করে গবেষণাকর্ম চালিয়ে যেতে পারবেন।


সর্বশেষ সংবাদ