‘সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরানোর সম্ভাবনা নেই’

সাত কলেজের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গঠিত  ১৩ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ খালেদ রহীম
সাত কলেজের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গঠিত ১৩ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ খালেদ রহীম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে করছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেছেন। এদিকে, ঢাবি থেকে এসব কলেজগুলোর অধিভুক্তি বাতিল হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরানো নিয়ে একটি গুঞ্জন উঠেছে। তবে এমন গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কলেজ শাখার অতিরিক্ত সচিব ও সাত কলেজের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গঠিত মন্ত্রণালয়ের ১৩ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ খালেদ রহীম।

গতকাল সোমবার (২৮ অক্টোবর) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে করা এক প্রশ্নের জবাবে খালেদ রহীম বলেছেন, সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরানোর কোনো গ্রাউন্ড তৈরি হয়নি। তাই এই মুহূর্তে এসব কলেজগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরানোর কোনো সম্ভবানাও নেই। 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সাত কলেজের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনকল্পে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১১টায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সভাকক্ষে এ কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আহ্বায়ক মোহাম্মদ খালেদ রহীম।

সভার আলোচ্যসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে খালেদ রহীম বলেন, প্রথম সভা হিসেবে গঠিত কমিটির কার্যপরিধি নিয়ে আলোচনা হবে। এ কমিটি কীভাবে কাজ করবে, কোন কোন বিষয়গুলো দেখতে হবে, কাজের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় সামনে থাকবে—প্রাথমিকভাবে সে সম্পর্কে আলোচনা হবে। এ কমিটি বর্ধিত করার একটা ব্যাপার আছে। কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে আরও কাকে কাকে কমিটিতে সংযুক্ত করা যায়—সে বিষয়েও আলোচনা হবে।

এদিকে, সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন। কিন্তু সরকার গঠন করেছে ‘অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনকল্পে’ কমিটি। সরকারের এ পদক্ষেপ তাদের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কমিটিতে তাদের দাবির কোনো প্রতিফলও ঘটেনি। তাই তারা এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা মঙ্গলবার থেকেই ‘শাটডাউন সায়েন্সল্যাব’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিষয়টি দৃষ্টিআকর্ষণ করলে খালেদ রহীম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন এ কমিটির মধ্যে কাভার করবে।

মন্ত্রণালয়ের কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে এ কমিটি তৈরি হয়েছে। এখানে অবশ্যই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করা হবে। যেহেতু আমরা এখনো তাদের বিষয়ে অফিশিয়ালি জানতে পারিনি, কে কোন কলেজকে রিপ্রেজেন্ট করছেন। আমরা এ বিষয়ে অধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলবো।

মন্ত্রণালয়ের ১৩ সদস্যের কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একজন প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের একজন প্রতিনিধি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একজন প্রতিনিধিসহ সাত কলেজের অধ্যক্ষরা রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা এ কমিটিতে কোনো শিক্ষার্থী প্রতিনিধি না রাখা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রাখার বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। তারা বলছেন, এই কমিটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রাখার অর্থ হলো সাত কলেজকে ফের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার একটা পরিকল্পনা।

মোহাম্মদ খালেদ রহীম বলেন, এটা শিক্ষার্থীদের ধারণা হতে পারে। তবে এরকম কিছু ঘটবে বলে আমার কাছে মনে হয় না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭-৮ বছর আগে সাত কলেজকে নিয়ে আসা হয়েছে। আবার ওইখানে ফিরে যাওয়ার মতো কোনো গ্রাউন্ড তৈরি হয়েছে বলে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা চাইলেও তো পূর্বের অবস্থায় ফেরার কথা না। সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরানোর কোনো সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। এটা আলোচনার পরে আরও পরিষ্কারভাবে বলা যাবে।

তিনি আরও বলেন, এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের এখন কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, আবার নতুন একটা বডিতে গেলে সেই সমস্যাগুলো মাথায় নিয়েই এগোতে হবে। সমস্যাগুলো আগে আমাদের আইডেন্টিফাই করতে হবে। ঢাবির অধীনেই যদি থেকে যেতো, তাহলে তো কমিটি করার দরকার ছিল না। এ কারণে আমাদের নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এর পেছনের যৌক্তিকতা লাগবে। কোন কারণে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কন্টিনিউ করতে চাই বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও কেন ফিরে যেতে চাই না। এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ