ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে সাত কলেজে ভোগান্তি
- অপূর্ব চক্রবর্তী
- প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৬ AM , আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:০০ AM
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে নেমেছিলেন অরুপ চক্রবর্তী। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে কোথাও চান্স হয়নি। তিনি বলছিলেন পরিবারের যা আর্থিক অবস্থা তাতে সার্মথ্য নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তাই শেষ ভরসা হিসেবে খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন সাত কলেজে। সাত কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছিলেন। করেছিলেন কলেজ ও সাবজেক্ট চয়েজের আবেদন।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির কারণে পিছিয়ে গেছে কলেজ ও সাবজেক্ট চয়েজের ফলাফল প্রকাশ কার্যক্রম। এতে করে হতাশায় রয়েছেন তিনি। শুধু অরুপ নয়, সাত কলেজের বিষয় ও কলেজ পছন্দ দেওয়া সব শিক্ষার্থীর অবস্থা এখন এমনই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি চললেও সাত কলেজে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। তবে ভর্তিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রমে ঢাবিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
অরুপ চক্রবর্তী বলেন, গতবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে ভর্তি পরীক্ষার জন্য বেশ কঠোরভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু বিধাতা সহায় হয়নি। এখন শেষ ভরসা সাত কলেজ। আমার আশেপাশের অনেক বন্ধুরা চান্স পেয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং যারা পাবলিকে চান্স পায়নি তাদের বেশিরভাগই এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আমার আর্থিক অবস্থা সচ্ছল নয় যে, আমি কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো। এমনিতেও তো পিছিয়ে আছি অপরদিকে শিক্ষকদের চলমান এ আন্দোলনের কারণে আরও এক ধাপ পিছিয়ে পড়লাম।
অরুপের এ অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন তার অভিভাবকরা। তার বাবা মলয় চক্রবর্তী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, প্রায় সব জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার কারণে এখন তার ছেলে সারাদিন ঘরে বসে থাকে। এতে করে দিন দিন তার মানসিক অবস্থারও অবনতি ঘটছে। তিনি শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ করে বলেন, তারা যেন নিজেদের পাশাপাশি ছাত্রদের কথাগুলোও একটু বিবেচনায় আনেন।
রাজধানীর সাত কলেজের মধ্যে একটি সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। কলেজটির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদা সুলতানা অণু। তিনি এ বছর প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তবে তার তৃতীয় বর্ষের দুটি বিষয়ে মান উন্নয়ন থাকায় এবার পুনরায় দিয়েছিলেন সে পরীক্ষাগুলো। এবার তিনি সে সাবজেক্ট দুটিতে পাস করেছেন। কিন্তু ফলাফল সমন্বয় না হওয়ার কারণে তিনি স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে পারছেন না।
তিনি জানান, তৃতীয় বর্ষের ফলাফল প্রকাশের মাসখানেক সময় কেটে গেলেও এখনো সমন্বয় হয়নি। এদিকে তার সহপাঠীরা স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়ে ক্লাসও শুরু করে দিয়েছেন। স্নাতক পরবর্তী উচ্চ শিক্ষা নিয়ে এক ধরনের শঙ্কায় দিন কাটছে তার।
এদিকে, সোহরাওয়ার্দী কলেজের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, শুধুমাত্র সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগেই ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী ফলাফল সমন্বয় না হওয়ার কারণে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে পারছেন না।
পূর্ব ঘোষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, অনার্স ২য় বর্ষের ফরমপূরণের তারিখ ২০ জুন থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এ কার্যক্রম যথাসময়ে হয়নি। একটি পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ার কারণে একই শঙ্কায় পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রথম বর্ষ ২০২৩ সনের ফরমপূরণ যথাসময়ে শুরু হলেও শেষ সময়ে এসে শিক্ষকদের এ আন্দোলনের কারণে পূর্ব ঘোষিত সম্ভাব্য তারিখ অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এখনও ফলাফল প্রকাশিত হয়নি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ফিন্যান্স ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের। ফলাফল প্রকাশ ও পরবর্তী বর্ষের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, গত ১ জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সকল অফিস কর্মবিরতি পালন করছে। এসময়ে সাত কলেজের ফলাফল প্রকাশ, ফরম পূরণ, তথ্য সংশোধন, নতুন ফরম পূরণের নোটিশ, ফলাফল সমন্বয় কার্যক্রম, সার্টিফিকেট ও মার্কশিট উত্তোলনের জন্য আবেদন, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম মেরিট প্রকাশসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে সাত কলেজের ক্লাস পরীক্ষা ও বিভাগীয় কার্যক্রম চালু রয়েছে।
শিক্ষকদের এ কর্মবিরতিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি নজরে আছে শিক্ষক নেতাদের। শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, এ আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জন্যেই। ভবিষ্যতে তারাই শিক্ষক হবেন। অনেক ধরনের অপপ্রচার চলছে এ আন্দোলন নিয়ে। বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এ আন্দোলন করা হচ্ছে। মূলত, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্যেই এ আন্দোলন করছে। আর, প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশের শিক্ষকদেরই মূলত জিম্মি করা হচ্ছে।