ইবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আ’লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত, বর্জন বিএনপির
আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি
- রাকিব হোসেন, ইবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২৮ AM , আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:০২ AM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আজ ১৯ ডিসেম্বর। এদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অনুষদ ভবনের ৪২৯ নং কক্ষে ভোটগ্রহণ চলবে। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে জামায়াত-আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। তবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের তিনটি সংগঠন। পদ ভাগাভাগির সমন্বয়ের অভাবে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরাও দুটি প্যানেলে নির্বাচন করছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের তিনটি সংগঠন রয়েছে। যথাক্রমে, জিয়া পরিষদ, সাদা দল এবং ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব)। দলীয় ‘হাই কমান্ডের নির্দেশে’ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপিপন্থি শিক্ষক সংগঠনগুলো। একইসঙ্গে তাদের সমর্থিত শিক্ষকদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার কড়া নির্দেশনা দিয়েছে নেতৃবৃন্দরা।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের শাপলা ফোরাম থেকে দুটি প্যানেল এবং জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের গ্রীণ ফোরাম।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবার আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের দুটি প্যানেলে পৃথকভাবে লড়বেন। এর মধ্যে সাবেক উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পক্ষের প্যানেলে সভাপতি পদপ্রত্যাশী ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক পদে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমানসহ ১৫ জনের প্যানেল দিয়েছেন। অপরদিকে বর্তমান উপাচার্য পক্ষের প্যানেলের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক স্বপনসহ ১৫ জনের প্যানেল দিয়েছেন।
জানা যায়, গত ২ ডিসেম্বর আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরামের নির্বাচন হয়। এতে প্রাক্তন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পক্ষের এবং বর্তমান উপাচার্য পক্ষের দুইটি পক্ষ অংশ নেয়। এতে ১৫ সদস্যের বিপরীতে নির্বাচনে সাবেকদের দশ এবং বর্তমানরা পাঁচটি পদে নির্বাচিত হয়। পরে ৪ ডিসেম্বর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদক সহ প্রধান পাঁচ পদে রয়েছে সাবেক পক্ষের শিক্ষকরাই। পরবর্তীতে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হলে শাপলা ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটি প্যানেল দেওয়া নিয়ে আলোচনায় বসে। এসময় তাদের মধ্যে পদ ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। সভায় সাবেক পক্ষরা সভাপতি সম্পাদক সহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো নিজেদের রেখে একটি প্যানেল অনুমোদনের দাবি তোলে। এসময় বর্তমান পক্ষের শিক্ষকরা তা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিজেদের পক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ পদের দাবি করে। তখন সাবেকরা তা দিতে রাজি না হওয়ায় কয়েক দফা আলোচনা করেও উভয়পক্ষ সমঝোতায় আসতে পারেনি। ফলে বিভক্ত হয়ে দুটি প্যানেলে নির্বাচন করছেন।
শাপলা ফোরাম মনোনীত সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, শাপলা ফোরামের সাধারণ সভা থেকে আমাদের প্যানেলটিই মনোনীত করা হয়েছে। এর বাইরে শাপলার সভাপতি-সম্পাদক ভালো বলতে পারবে।
আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অন্য প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, তাদের প্যানেলে আগে প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা একাধিক ব্যক্তি রয়েছে। ভবিষ্যতে তারা আবারো বিভিন্ন পদে আসতে চায়। ১৫ সদস্যের কমিটিতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ না দিয়ে একজন যুগ্ম সম্পাদক ও চার-পাঁচজন সদস্যকে কমিটিতে রাখতে চায় তারা। আমরা সমঝোতার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো ফল না পাওয়ায় আলাদাভাবে প্যানেল ঘোষণা করেছি।
শাপলা ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, মাহবুব-মামুন প্যানেল ছাড়া শাপলা ফোরাম মনোনীত আর কোনো প্যানেল নেই। আমরা গঠনতান্ত্রিকভাবে প্যানেল ঘোষণা করেছি। আমরা অপরপক্ষকে শাপলা মনোনীত নামটি ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করেছি। তবে কেউ এককভাবে বা জোটবদ্ধভাবে বিক্ষুব্ধ হতেই পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, একই ধারার একই চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষকদের মধ্যে এমনটা আমাদের জন্য প্রত্যাশিত না। আমি দুইবার বসে তাদেরকে অনুরোধ করেছি এক হওয়ায় জন্য। তারা আলাদা হওয়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বড় কোনো কারণ কিংবা রাজনৈতিক মতাদর্শগত কোনো কারণও নেই। এতে যদি তৃতীয় পক্ষ সুযোগটা পেয়ে যায় তাহলে তাদের উপর সরকারের নির্ভরযোগ্যতা কোথায় যাবে এটা তাদের ঠিকভাবে ভাবা উচিত ছিল।
নির্বাচন বর্জন সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) সভাপতি ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমরা শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না। এ ছাড়া ভোটেও অংশ নেবেনা কোনো সদস্য।