টিউশনি-বৃত্তির টাকায় লাইব্রেরি, যেভাবে আলো ছড়াচ্ছে কুবির রাফি
- মোহাম্মদ রাজীব, কুবি
- প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩০ AM , আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩০ AM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আরাফাত আমিন রাফি। স্বাধীনচেতা রাফি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে একটু ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী। তিনি আত্মকর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। কলেজ জীবন থেকেই তার ইচ্ছা ছিলো উদ্যোক্তা হওয়ার। দীর্ঘদিনের ইচ্ছে পূরণ করতে রাফি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বইয়ের দুশ্চিন্তা লাগব করতে একটি বইয়ের দোকান প্রতিষ্ঠা করেছেন।
রাফি ক্লাস, পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন এসবকিছু সামলে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসাটি। তার এই কাজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও তার সহপাঠীরা ইতিবাচকভাবে দেখছেন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাজীব।
রাফির এই উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনের গল্প
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তাদের শিক্ষকগন বিভিন্ন বই কিনতে বলেন। কিন্ত ক্যাম্পাসের সামনের দোকানগুলোতে বইগুলো পাননি। ক্যাম্পাস সম্মুখে কোন একাডেমিক বইয়ের দোকান নেই দেখে রাফি রীতিমতো অবাক হন। পরবর্তীতে রাফি কুমিল্লা শহর থেকে বইগুলো সংগ্রহ করেন। ১০০ টাকা খরচ করে শহরে বই কিনতে গেলে সকল বই সবসময় পাওয়া যায় না। এই বিষয়টি তাঁকে অনেকটা ব্যথিত করেছে। সেজন্য প্রথম বর্ষ থেকেই অনলাইনে বই বিক্রি শুরু করে। এবং অনলাইনে বেশ সাড়া পায়। পরবর্তীতে একটি স্থায়ী প্লাটফর্মের জন্য রাফি দোকান দেওয়ার কথা চিন্তা করেন। প্রথমে তার পরিবারের কেউই রাজি হতে চাননি। কিন্তু পরবর্তীতে রাফির ইচ্ছা ও একাগ্রতা দেখে পরিবারের সদস্যরা রাজি হন।
বৃত্তি হতে প্রাপ্ত অর্থ ও টিউশনের হতে অর্জিত সম্মানী মিলে ১ লক্ষের অধিক টাকা জমিয়েছিলেন রাফি। তার জমানো অর্থ ও মায়ের কাছে থেকে ৩ লক্ষ অর্থ ধার নিয়ে ব্যবসাটি শুরু করেছেন তিনি। দোকানের সিকিউরিটি হিসেবে দিয়েছেন ১ লক্ষ টাকা এবং বাকী অর্থ দিয়ে ডেকোরেশন ও অন্যান্য সামগ্রী কিনেছেন।
আল রাফি লাইব্রেরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগের একাডেমিক বই পাওয়া যায়। পাশাপাশি নন একাডেমিক বইয়ের অর্ডার নেওয়া হয় এবং সর্বোচ্চ কম সময়ের মধ্যে সুলভ মূল্যে পাঠকের কাছে বই পৌঁছানো হয়। এছাড়াও খাতা-কলম,বই, ফটোকপি ও বিভিন্ন স্টেশনারিসহ যাবতীয় জিনিসপত্র পাওয়া যায় তার লাইব্রেরিতে।
রাফি বলেন, আমি সবসময় চেয়েছিলাম নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। বাবা-মা আমাকে ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে আসছে। আজ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। আমি এখন বড় হয়েছি তাই নিজের খরচের বোঝা পরিবারের উপর চাপাতে চাই না। এজন্য আমি আত্মকর্মসংস্থানের এ পথটি বেছে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে দোকান দেওয়া নিয়ে বাবা কিছুটা দ্বিমত পোষণ করলেও পরবর্তীতে বাবা-মা দুজনই আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন। তাদের সমর্থন পেয়ে উৎসাহিত হয়ে আমি দোকানটি দিয়েছি।
ভবিষ্যৎতে রাফির ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটি সমৃদ্ধশালী বইয়ের দোকান দেওয়া। যেখানে দেশের সকল প্রকার বই বিক্রি করা হবে। শুধু মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে নয় বরং সেবার লক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে ক্যাম্পাস থেকে খুব সহজেই বই কিনতে পারে এটাই তার মূল উদ্দেশ্য।
নিজ ডিপার্টমেন্টের একজন বন্ধুকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে দেখতে পেয়ে নিজেকে গর্ববোধ করছি বলে জানান রাফির সহপাঠীরা। তারা বলেন হয়তো আমরা সবাই একদিন ভালো কিছু করবো। তবে নিজের চোখে ডিপার্টমেন্টের একজন বন্ধুর এমন সফলতা দেখা সত্যিই আনন্দের ও গর্বের বিষয়। রাফির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।