শিক্ষার্থীদের মূল সনদ দিচ্ছে না ৩৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, হয়নি সমাবর্তন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২২, ০১:১৮ PM , আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২২, ০১:৩৪ PM
শিক্ষাজীবন শেষ করার পর সমাবর্তনের মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে মূল সনদ বিতরণ করার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের মূল সনদ দিচ্ছে না ৩৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আয়োজন করা হয়নি কোনো সমাবর্তনের। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে তাগিদপত্র দেয়া হলেও এ বিষয়ে তাদের কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
মূল সনদ না পাওয়াতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিদাতারা গ্র্যাজুয়েটদের মূল সনদকে গুরুত্ব দেন। আর চাকরি ছাড়াও কোনো শিক্ষার্থী যদি উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চান, স্কলারশিপ পাওয়ার পর মূল সনদ জমা দিতে হয় বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। মূল সনদে নিতে হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সত্যায়নও। কিন্তু মূল সনদ না পাওয়ায় অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েটরা স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারছেন না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র হতে জানা যায়, এসব বিশ্ববিদ্যালগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঈশাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়া আরও রয়েছে- ফেনী ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, টাইমস ইউনিভার্সিটি, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
সমাবর্তন না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আরও রয়েছে, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, এনপিআই ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ ও আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটিসহ আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর সমাবর্তনের আয়োজন করেনি।
আরও পড়ুন: এক শিক্ষাবর্ষে গবেষণায় ১ টাকাও ব্যয় করেনি ১৭ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর তথা আচার্য হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। আচার্য অথবা আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বা অন্য কোনো প্রতিনিধির সভাপতিত্বে সমাবর্তনের মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েট তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সনদ বিতরণ করা হয়। পাঠদান শুরুর পর কোনো সমাবর্তন আয়োজন না করায় ৩৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সনদ না পেয়ে নানা বিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের নিয়ম-কানুন মানতেই চায় না। একটি সমাবর্তন শুধু মূল সনদ প্রদানের অনুষ্ঠানই নয়, বরং এটি গ্র্যাজুয়েটদের বড় একটি মিলনমেলা, যা নিয়ম মেনে হওয়া উচিত। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা মূল সনদ পাচ্ছে না সরকারের উচিত এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ, মূল সনদ না পেলে গ্র্যাজুয়েটদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এমন বিপত্তির সম্মুখীন হওয়ায় এর প্রতিকার চেয়ে ইউজিসিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ এ প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল সনদ দিতে সমাবর্তনের আয়োজন করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কখনই সমাবর্তন করেনি। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সরকারের আইন না মানার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত নিয়মিত সমাবর্তনের আয়োজন করা।