উচ্চশিক্ষা কোথায়: প্রাইভেট নাকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়?

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে এই বছর এইচএসসি পাস করেছেন লাবণী রহমান। বাবা পেশায় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এই বছর মেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ৬৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন তিনি। তবে এরপরেই চিন্তা বেড়েছে তার। মেয়েকে উচ্চশিক্ষার জন্য কোথায় ভর্তি করাবেন। মেয়ে কি এতো এতো শিক্ষার্থীর দেশের সরকারি কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিতে পারবে, নাকি শেষ পর্যন্ত মেয়েকে কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে হবে।

এইচএসসিতে এই বছর পাস করেছেন মোট ১০ লাখ ৬৬ হাজার ২৪২ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২২ জন শিক্ষার্থী।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুসারে, উচ্চশিক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ হাজার আসন আছে। এছাড়া ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৭৫, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে ডিগ্রি পাশ ও স্নাতকে ১০ লাখ ৯৩ লাখ ৮১১, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফাজিল ও অনার্স মাদ্রাসায় ৬০ হাজার আসন আছে প্রথমবর্ষে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা নির্ধারিত নেই।

আরও পড়ুন : চবিতে সেকেন্ড টাইম দাবিতে স্মারকলিপি, যা বলছে ইউজিসি

তবে গত বছর সর্বশেষ ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। দুটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৪০, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ হাজার ৪০৪, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ২৩ হাজার ৩৩০ আসন আছে। ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৭২০, ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে ৭২০, সরকারি ও বেসরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ৬শ, ১৪টি মেরিন অ্যান্ড অ্যারোনটিকাল কলেজে ৬৫৪, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৩ হাজার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২৯০টি আসন আছে।

এক্ষেত্রে সবকিছু বিবেচনায় একজন শিক্ষার্থী যদি কোন কারণে ওই শিক্ষার্থী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পান, তবে তার শেষ ভরসার জায়গা দেশের কোনো প্রাইভেট কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি, প্রশ্ন প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ, চূড়ান্ত সার্টিফিকেট প্রদানসহ শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, নানান জটিলতায় ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন’ অর্জন করতে পারে না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করতে না পারা, পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্র প্রণয়নে জটিলতা, পরীক্ষার ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, বিভিন্ন বিভাগে গণহারে ফেইলসহ নানাবিধ সমস্যার সুরাহা হয় না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আরও পড়ুন : জাবির ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার

তিনি জানান, শিক্ষাজীবনে এত খারাপ পরীক্ষার রেজাল্ট কখনো হয়নি। আমি চূড়ান্ত পরীক্ষায় যেমনটি লিখেছি নাম্বার কম পেলেও একেবারে তিন বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ার মতো নয়। কেন এমন ফল বিপর্যয় হলো সেই সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা আমার সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকেও পাইনি।

রিফাত আরও বলেন, নির্দিষ্ট সিলেবাস, একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকায় এবং প্রশ্নপত্র, মানবণ্টন ও পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় শিক্ষার্থী ফল বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। আবার ফল বিপর্যয়ের পর কোন ধরনের ঘাটতি অথবা কারণগুলো শিক্ষার্থীদের সম্মুখে উন্মোচিত করা হচ্ছে না। যার ফলে প্রতিটি শিক্ষাবর্ষেই কিছু কিছু শিক্ষার্থী অকালেই ঝরে পড়ছে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার স্বপ্ন ধরা দিচ্ছে না বাস্তবে।

আরও পড়ুন : চবির ভর্তি আবেদন শুরু বুধবার

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন ফারিয়া পারভিন। এর পিছনে বেশ কিছু কারণও জানাচ্ছেন তিনি। ফারিয়া জানান, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আমার পরিবারের পক্ষে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো খরচ দেওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই দুই সেমিস্টার পড়াশোনা শেষ করে জাতীয় বাড়ির পাশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। এজন্য আমার একটি বছর হারিয়ে গেছে।

ফারিয়া আরও জানান, আমাদের জেলায় ভালো কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তাই ঢাকায় থেকে অন্যান্য খরচও অসম্ভব ছিল। এছাড়া নিয়মিত ক্লাস থাকায় অন্য কোনো উপায়ে বাড়তি আয়ের কোন সুযোগও থাকে না। তাই মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা প্রায় অসম্ভব।

ফেনী সরকার কলেজে প্রাণিবিদ্যায় মাস্টার্স করছেন হোসাইন আরমান। তিনি জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস, ব্যবহারিক ক্লাস হয় না,  এজন্য শিখন ঘাটতি থেকেই যায়।  কোন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয় না, এজন্য শিক্ষার্থীরা গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে না। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পেয়ে থাকে। হাতে কলমে শিখানো হয় না বলে চাকরি জীবনে গেলেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়। তবে সুবিধা হচ্ছে নিয়মিত ক্লাস করতে হয় না তাই পড়ালেখার পাশাপাশি অন্য চাকরি করার সুযোগ থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজে পাশ করা যায়।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদনের খুঁটিনাটি

দেশের একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে পড়ছেন শিপন চন্দ্র দাস। তার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পিছনেও কারণ রয়েছে। শিপন জানান, দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংকট। এজন্য পড়ার সুযোগ হয়নি। তাই একটু বেশি অর্থ খরচ হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিয়েছি। এর কারণ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সেশনজট নেই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উন্নত মানের শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে। বেশ কিছু ভালো ভালো বিষয়ও রয়েছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজের ফাইনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শেখ সুমন ও পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী আফরিন সুলতানার সঙ্গে। তারা জানান, মূল সমস্যা পরীক্ষার প্রশ্নের ধারা। তাদের নিয়মিত ক্লাস হয় না । সিলেবাস কম ফলো করা হয়।

তারা আরও জানান, শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে উদাসীন মনোভাব। শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ অনেক কম। প্রতি শিক্ষাবর্ষে সবকিছু মিলিয়ে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। এই হিসেবে প্রায় সব মিলিয়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় একজন শিক্ষার্থী অনার্স শেষ করতে পারেন। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এই খরচ কয়েক গুণ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence