কম্বোডিয়ান গণহত্যার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবিনার

ওয়েবিনার
ওয়েবিনার  © টিডিসি ফটো

কম্বোডিয়ার ‘খেমার সমাজতান্ত্রিক দল’ বা ‘খেমার রুজ’ সংগঠনের দ্বারা সংগঠিত গণহত্যার পঞ্চাশ বছরপূর্তী উপলক্ষে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ওয়েবিনার সিরিজের আরেকটি পর্ব আয়োজন করেন। গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এই ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। 

ওয়েবিনারের প্রধান আলোচক ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, ইউনেস্কো চেয়ার এবং সেন্টার অব জেনোসাইড এন্ড হিউমেন রাইটসের ডিরেক্টর ডক্টর এলেক্স হিন্টন।

ওয়েবিনারে প্রারম্ভিক বক্তব্য প্রদান করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং  মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর মো. রিজওয়ানুল ইসলাম এবং ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন অফিস অব রিসার্চের এর ডিরেক্টর এবং দর্শন বিভাগের অধ্যাপক নরমান কে. সোয়াজো।  

প্রারম্ভিক বক্তব্যে অধ্যাপক রিজওয়ানুল বলেন, ‌‘বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের স্বার্থ হাসিল ও পরাশক্তির প্রভাবে কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর উপর সংগঠিত গণহত্যার বিচারিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে আসছে। যার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো খেমার রুজ তথা পল পটের নেতৃত্বে সংগঠিত এই নির্মম গণহত্যা, যার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হতে সময় লেগেছে প্রায় তিন দশক।’

মূল আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক হিন্টন সুসংগঠিত গণতন্ত্রের বিভিন্ন বিষয় যেমন বিচার প্রাপ্তির অধিকার, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদির বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং এগুলোর অভাব কীভাবে গণহত্যাকে ত্বরান্বিত করে তা ব্যাখ্যা করেন। এরপর ডক্টর হিন্টন ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হওয়া কম্বোডিয়ার খেমার রুজ দ্বারা সংগঠিত নির্মম গণহত্যার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। 

কম্বোডিয়ায় সংগঠিত গণহত্যার সাথে বর্তমান বিশ্বের চলমান মানবাধিকার সংকট এবং শিথিল বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক স্থাপন করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে গাজা, সোমালিয়াসহ বহু অঞ্চলে গণহত্যা সংগঠিত হচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত মানুষের মানবাধিকার নির্মমভাবে খর্ব হওয়ার খবর অমরা দেখতে ও শুনতে পাচ্ছি।’

তিনি আমেরিকাসহ বিশ্ব মোড়লদের সমালোচনা করে আরো বলেন, ‘গণতন্ত্র চর্চার সবচাইতে উত্তম মাধ্যম হলো একটি রাষ্ট্রকে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু বর্তমানে অমরা বিশ্ব মোড়লদের এ বিষয়ে নিশ্চুপ ভূমিকা দেখতে পাচ্ছি, যা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অন্তরায়।’ 

এরপর অধ্যাপক হিন্টন উক্ত গণহত্যার ফলে কম্বোডিয়ার সামগ্রিক ক্ষতির কথা তুলে ধরেন এবং সেই নির্মম গণহত্যার পরে কম্বোডিয়ার অর্থনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ঘুরে দাঁড়ানোর গৌরবময় ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ ব্যাখ্যা করেন। এছাড়াও চীনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা না থাকলেও খেমারুজদের পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছিল চীন। তাই এই গণহত্যায় চীনেরও দায়ভার আছে।’ 

এছাড়াও অধ্যাপক হিন্টন গণহত্যা বিষয়ক তার বিশ্লেষণধর্মী অন্যান্য গবেষণার উপর আলোকপাত করেন। সমালোচকবৃন্দের বক্তব্য সম্পন্ন হওয়ার পর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। দেশি এবং বিদেশি ছাত্র, শিক্ষক, গবেষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার শ্রোতাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রাণবন্ত ছিল ওয়েবিনারটি।  

 


সর্বশেষ সংবাদ