সৌর সেচে কমবে কৃষকের ফসল উৎপাদন খরচ: এআইইউবির ওয়ার্কশপে গবেষকরা

সৌরসেচের ছবি ও এআইইউবি’র লোগো
সৌরসেচের ছবি ও এআইইউবি’র লোগো  © সম্পাদিত

সৌরশক্তি (সোলার) নির্ভর কৃষিপ্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। সনাতন পদ্ধতিকে পেছনে ফেলে সৌরশক্তি নির্ভর সেচ প্রযুক্তির দিকে ছুটছেন এখন প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকেরাও। কৃষকের কথা মাথায় রেখে ফসল আবাদের খরচ কমাতে ‘প্রযুক্তিগত প্রণোদনার মাধ্যমে সামাজিক উদ্ভাবন: সৌর সেচের প্রসারে একটি কার্যকর আচরণগত কৌশল নির্ধারণ’ শীর্ষক সমন্বিত গবেষণা প্রকল্পটি বর্তমানে বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে যা কৃষকদের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। 

বাংলাদেশের প্রান্তিক কৃষকদের সংযুক্ত করে আধুনিক এই সেচ প্রকল্পের প্রসারে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে 
বেসরকারি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি- বাংলাদেশ (এআইইউবি), অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। এশিয়ান ডিজাস্টার প্রিপার্ডনেস সেন্টার (এডিপিসি), থাইল্যান্ড-এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের ডারহাম ইউনিভার্সিটি।

ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া অতিথিরা

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে গবেষণালব্ধ প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপন এবং কর্মশালার আয়োজন করে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি- বাংলাদেশ (এআইইউবি)। দিনব্যাপী এ কর্মশালায় অস্ট্রেলিয়ার কর্টিন ইউনিভার্সিটি, বেসরকারি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশের গবেষক, প্রযুক্তিগত, বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক এবং কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ'র ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই ওয়ার্কশপটির আয়োজন করতে পেরে খুবই আনন্দিত। একই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য ডারহাম ইউনিভার্সিটি ও এডিপিসি কর্তৃপক্ষকেও আমরা ধন্যবাদ জানাই। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, সোশ্যাল ইরিগেশন সম্পর্কে আরও বেশি সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বাংলাদেশের কৃষিতে স্থায়ী উন্নতি করার জন্য সোলার ইরিগেশনের বিকল্প নেই।’

কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের ডারহাম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. হাবিব রাহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. জিনাতুল ইসলাম। প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর ওপেন ডিসকাশনের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেয়া শিক্ষক ও গবেষকগণ প্রকল্পের অগ্রগতির লক্ষ্যে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন। এতে মডারেটর হিসেবে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া অতিথিদের গ্রুপ ফটো

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘কৃষির উন্নতি ও ফসল উৎপাদনে খরচ কমাতে সোলার ইরিগেশন পদ্ধতি অনেক বেশি সহায়ক হবে। এটা একই সঙ্গে কৃষকের ফসল চাষের খরচ কমাবে। আমরা এই প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরে গর্বিত। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অর্জন করার জন্য পরিবেশবান্ধব সেচ পদ্ধতির বিকল্প নেই। এটা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনেও সহায়ক হবে।’

কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এআইইউবি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মিসেস নাদিয়া আনোয়ার। এছাড়াও অতিথ হিসেবে ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি অনুবিভাগ) ড. মো. মাহমুদুর রহমান, এআইইউবি-এর উপাচার্য প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম, যুক্তরাজ্যের ডারহাম ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মাইকেল নায়েফ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন খান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহমুদুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এআইইউবি’র ট্রাস্টিবোর্ড সদস্য ইশতিয়াক আবেদীন ও ড. কারমেন জেড. লাগামনা। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এআইইউবি’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর প্রফেসর ড. মো. আবদুর রহমান। 

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউসিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘কৃষির উন্নতি ও খরচ কমাতে আমাদের দেশে সোলার ইরিগেশন পদ্ধতি অনেক বেশি সহায়ক হবে। এটা একই সঙ্গে কৃষকের ফসল চাষে খরচ কমাবে। আমরা এ ওয়ার্কশপ আয়োজনে সংযুক্ত হতে পেরে গর্বিত। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অর্জন করার জন্য পরিবেশবান্ধব সেচ পদ্ধতির বিকল্প নেই। এটা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনেও সহায়ক হবে।’

কর্মশালায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, আধুনিক যুগেও কৃষকের ফসল উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি, কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে ফসল উৎপাদনের খরচ কমানো জরুরি। আমরা পরিবেশ বান্ধব উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাই। সৌর সেচ প্রকল্পের মতো আপনাদের টেকসই উদ্যোগগুলো সরকারকে সহায়তা করবে। কৃষকের খরচ বাঁচিয়ে তাদের লাভবান করতে পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। কাজেই আমি মনে করি, সৌর সেচের এই প্রকল্প অনেক বেশি সময়োপযোগী।

ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া অতিথিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিচ্ছ এআইইউবি

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ'র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা মেম্বার ও চেয়ারম্যান নাদিয়া আনোয়ার বলেন, সোলার ইরিগেশন প্রজেক্টের লোকাল পার্টনার হিসেবে যুক্ত হতে পেরে এআইইউবি গৌরব অনুভব করে। আমরা বরাবরই অ্যাকাডেমির সাথে ইন্ডাস্ট্রি এবং গবেষকদের সাথে পলিসি মেকারদের সংযোগ ঘটাতে উদগ্রীব। সোলার ইরিগেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব। 

নাদিয়া আনোয়ার আরও বলেন, এআইইউবি সবসময় ক্রস বর্ডার ও ক্রস কালচারাল জ্ঞানের উদ্ভাবন-বিতরণের কাজ করে আসছে। আগামীর উন্নত এবং পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিনিয়ত অবদান রেখে আসছে। সৌর সেচের এই উদ্যোগ এআইবিউর মিশন ভিশনের একটি অংশ। আমি আশা করছি, এই প্রজেক্টটির মাধ্যমে কৃষকদের আচরণগত পরিবর্তন ও কৃষির টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে এআইইউবি যেন আগামী দিনেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে তারজন্য আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।


সর্বশেষ সংবাদ