সরকারে দলীয় উপদেষ্টা ও প্রশাসনের ব্যক্তিদের বদলাতে হবে: আনিসুল ইসলাম

আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ  © টিডিসি ফটো

জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘কোনো আইনে নয়, ছাত্র-জনতার, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের রক্তের মধ্য দিয়ে ড. ইউনুস রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছেন। তাই কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তির ওপর নয়, তাঁকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে দায়িত্ববোধের ওপর। আর সে দায়িত্ববোধ হলো, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। 

নির্বাচন আয়োজনের আগে অবশ্যই সরকারের মধ্যে থাকা দলীয় উপদেষ্টা ও প্রশাসনের ব্যক্তিদেরও বদলাতে হবে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির এ নেতা। উপজেলা দিবস উপলক্ষে বুধবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে হাওলাদার টাওয়ারে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সভায় বলেন, দল নিরপেক্ষ প্রশাসন ছাড়া কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এ কথা শুধু আমার নয়, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এ কথা বলেছেন। এর আগে সরকারের তথ্য উপদেষ্টা বলেছেন, প্রশাসন বিএনপি এবং জামায়াত ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আজ (বুধবার) সকালে আইআরআই প্রতিনিধিরা আমার কাছে জানতে চেয়েছে, জাতীয় পার্টি নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে কিনা? উত্তরে আমি বলেছি, আমরা নির্বাচন অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখেছে। প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয় না। নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্রচার করতে পারছি না। সরকার বলেছে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। এ অবস্থায় আমরা কীভাবে নির্বাচন অংশগ্রহণ করব?

ব্যারিস্টার আনিস বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলছেন, আগামী নির্বাচন সবচেয়ে সুন্দর গ্রহণযোগ্য হবে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার ওপর বিশ্বাস এবং আস্থা রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান যে পরিস্থিতি, তা দেখলে কোনোভাবেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক হবে। 

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার সংস্কারের কথা বলছে। তারা উপজেলাকে শক্তিশালী করতে চায়। সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমতা পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের নেতা প্রয়াত এরশাদ উপজেলা পদ্ধতি চালু করেছিলেন। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় দেওয়ার পর বিএনপি সে পদ্ধতি বাতিল করে। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলো উপলব্ধি করেছে, সাধারণ মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য উপজেলার বিকল্প নেই। 

তারা আবার উপজেলা পদ্ধতি চালু করেছিল উল্লেখ করে এ নেতা বলেন, ‘৩৫ বছরেও উপজেলাকে শক্তিশালী করা হয়নি। বর্তমান সরকার উপজেলাকে শক্তিশালী করার জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেজন্য আমি ধন্যবাদ জানাই।’

আরও পড়ুন: দেশবিরোধী প্রচারণায় অর্থযোগান: সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার দেখালেন আদালত

সভায় জাতীয় পার্টির এ অংশের মহাসচিব এ  বিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আগামী নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু , নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে নির্বাচনের পর গঠিত পার্লামেন্ট ক্ষণস্থায়ী হবে। তাই প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করব, যাতে করে নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণে হয়, সে ব্যবস্থা করার জন্য।’

হাওলাদার আরো বলেন, ‘জাতিসংঘে গিয়ে অধ্যাপক ইউনুস বলেছিলেন, ছাত্ররা তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। কীভাবে তিনি এ কথা বলেছিলেন, আমার বোধগম্য হচ্ছে না। জুলাই আগস্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতা সবাই রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে। সব শ্রেণীর মানুষের জীবন ও রক্তের মধ্য দিয়ে এসেছে তা নেতৃত্বাধীন সরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তিনি যে ছাত্রদের কথা জাতিসংঘে বলেছিলেন, তাদের কথাও তিনি আর শুনছেন না।’ 

ছাত্ররাও অধ্যাপক ইউনুস সরকারের সমালোচনা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে প্রমাণ হয় রাজনীতিতে চিরশত্রু বা চির বন্ধু কেউ নয়। তাই আমি ড. ইউনুসকে অনুরোধ করব, আপনি কোনো বিশেষ পক্ষ অবলম্বন না করে, দেশ এবং দেশে মানুষের স্বার্থে এমন একটি নির্বাচন উপহার জাতিকে দেন, যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দুনিয়াতে আপনার সুনাম অক্ষুন্ন থাকবে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন পার্টির নেতা কাজী ফিরোজ রশিদ, মো. মুজিবুল হক চুন্নু,  সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, মোবারক হোসেন আজাদ, ফখরুল আহসান শাহজাদা প্রমুখ।


সর্বশেষ সংবাদ