‘কথাটা হৃদয়ে থেকে যাবে দীর্ঘদিন’—জারাকে কী বলেছিল কিশোরী তাকিয়া

তাকিয়ার সঙ্গে ডা. তাসনিম জারা
তাকিয়ার সঙ্গে ডা. তাসনিম জারা  © সংগৃহীত

রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা সম্প্রতি সারা দেশে সভা-সমাবেশ শুরু করেছেন। জেলায় জেলায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। জনগণের প্রত্যাশার কথাও মনোযোগ দিয়ে শুনছেন তারা। এসব সভা-সমাবেশে অংশ নিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারাও।

শনিবার (৫ জুলাই) তাদের সভা ছিল বগুড়ায়। সেখানে তাকিয়া নামের ষষ্ঠ শ্রেণির এক কিশোরী ভবিষ্যতে কী হতে চায়, জানতে চান জারা। পরে বিষয়টি নিয়ে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করেন।

পোস্টে জারা লেখেন, ‘আজ বগুড়ায় আমাদের মিছিলে একটি ছোট মেয়ে তার মায়ের হাত ধরে যোগ দিয়েছিল। তার নাম তাকিয়া। সে এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আমি তাদের মঞ্চের কাছে ডেকে নেই। তাকিয়া একরাশ উজ্জ্বল হাসি দিয়ে তাকায়—সেই নির্মল উজ্জ্বলতা, যা কেবল শিশুদের কাছেই সম্ভব। আমাদের মধ্যে এমনভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়, যেন আমরা সব সময়ই একে অপরের সঙ্গে দেখা করার কথা ভেবেছিলাম। আমি নিচু হয়ে তাককে জিজ্ঞেস করি, “তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?” সে সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়— যেন প্রশ্নটা অনেক দিন ধরে ওর ভিতরে ফুটে উঠছিল। “আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। তারপর আমি অক্সফোর্ডে যাব।” এই মুহূর্তটা হৃদয়ে থেকে যায়, দীর্ঘদিন ধরে।”

আরও পড়ুন: দেড় শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকে পুনর্বাসন করেছে ছাত্রদল

তিনি লেখেন, ‘তার মা তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন— স্থির, গর্বিত, আর নীরব। অনেক নারীর মতোই, যেভাবে শিখে ফেলেন কীভাবে নীরবে গর্ব বহন করতে হয়। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, “দয়া করে নিশ্চিত করবেন যে, তাকিয়ার প্রয়োজনীয় সবকিছু সে পায়। শুধু এই স্বপ্নটা পূরণের জন্য নয়, চাইলে যেন আরও দূরেও যেতে পারে।”’

তাসনিম জারা লেখেন, ‘কারণ একটি মেয়ের স্বপ্নে এক ধরনের বিপ্লব থাকে। বিশেষ করে যখন সেই স্বপ্ন সাহস করে জগৎ তার জন্য যে সীমানা টেনে রেখেছে, তার বাইরে যেতে চায়। তাকিয়ার মতো স্বপ্ন কেবল ব্যক্তিগত ইচ্ছা নয়— এগুলো কল্পনার পরিধি বাড়িয়ে দেয়। আমাদের সবাইকে নতুন করে ভাবতে শেখায়— কী স্বাভাবিক, আর কী সম্ভব।’

‘সেই মুহূর্তে আমি নিজের অতীতকে মনে করেছিলাম— যখন আমার কাছেও অক্সফোর্ড ছিল একদম অসাধ্য একটা স্বপ্ন। শুধু ভৌগলিক নয়, মানসিকভাবেও দূরবর্তী। সেটা ছিল এক ধরনের নক্ষত্রপুঞ্জের মতো নাম— সুন্দর, কিন্তু ছোঁয়ার বাইরে। তখন কেউ একজন, আমার মতো পটভূমির একজন মানুষ, সহজভাবে বলেছিল, এইটা সম্ভব। শুধু চেষ্টা করো। সেই সাধারণ বাক্যটাই আমার ভিতরের কিছু একটা বদলে দিয়েছিল।’

এনসিপির নেত্রী আরও লেখেন, ‘তাই যখন তাকিয়া বলল “অক্সফোর্ড”, আমি শুনিনি— যেন কোনো শিশু নিজের দেশকে পেছনে ফেলে যেতে চায়। আমি শুনেছিলাম, এক শিশু তার দেশকে ডেকে বলছে— “তুমি আরও বড় হও। এমন হও, যেন আমার স্বপ্নগুলো এখানেই পূরণ হতে পারে”।’

আরও পড়ুন: ‘মব’ তৈরি করে টাকা-স্বর্ণালংকার লুটের অভিযোগ সাবেক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে

জারা লেখেন, ‘যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাজশাহী বা চট্টগ্রাম— এগুলো হয় আরও সমৃদ্ধ, আরও সম্মানিত, আরও প্রস্তুত তরুণ মন তৈরির জন্য, ঠিক যেভাবে বিদেশি নামগুলো হয়। যেন তাকিয়ার মতো একটি মেয়ের স্বপ্ন কোনো ‘অসাধারণ ঘটনা’ নয় — বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক, উদার সমাজের স্বাভাবিক ফলাফল।’

তিনি লেখেন, ‘তাকিয়া যেন অক্সফোর্ডের স্বপ্ন দেখে— এই অধিকার তার প্রাপ্য। কিন্তু আমাদেরও স্বপ্ন দেখা উচিত— একটি বাংলাদেশের, যেখানে উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে পাসপোর্ট লাগে না। যেখানে উৎকর্ষকে লালন করা হয় নিজের মাটিতে। যেখানে তাকিয়ার মতো মেয়েরা ব্যতিক্রম নয়,  বরং নিয়ম।’


সর্বশেষ সংবাদ