ক্ষমতায় গেলে প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য যে সুখবর দিলেন তারেক রহমান

ক্ষমতায় গেলে প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের জন্য কী করা হবে সেই সম্পর্কে তার রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য সুখবর জানিয়েছেন তিনি। সেখানে শিক্ষকদের জন্য বাজেট বৃদ্ধি, বেতন বৃদ্ধি, সামাজিক মর্যাদা এবং আধুনিক বিশ্বের যুগোপযোগী শিক্ষার কথা তুলে ধরেন।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) লালমনিরহাট জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে কেন্দ্রীয় বিএনপির আয়োজনে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ সুখবর জানান।
তিনি বলেন, আমাদের যে প্রাইমারি লেবেলের শিক্ষা ব্যবস্থা আছে সেখানে আমাদের খুব বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এটি হচ্ছে বুনিয়াদ শিক্ষা। এখানে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমে আমরা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক যারা আছেন তাদের দুটো বিষয়কে আমরা অ্যাড্রেস করতে চায়। প্রাইমারি, স্কুল, কলেজ যেটাই হোক না কেন, তার যে জীবিকা সেটা তো তার পরিবার পরিজন নিয়ে চলবে হবে। এখন তাকে আমাদের সেই মিনিমাম সাপোর্টটা দিতে হবে। আমরা যেটা খেয়াল করেছি সেটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমরা একটা জিনিস চেষ্টা করব সেদিক থেকে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসতে।
তিনি বলেন. ‘আমরা খেয়াল করছি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে তাকে বেতন হিসেবে যেটা দেওয়া হচ্ছে সেটি তার জন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট নয়। তাকে হয়ত সেকেন্ড আরেকটা কাজ করতে হয় সংসারটা চালানোর জন্য। আমাদের যে লক্ষ্য হচ্ছে আমরা এখানে বাজেটটা বাড়াব। বাড়িয়ে আমরা প্রথমেই চেষ্টা করব তাকে প্রথমেই আমরা সামাজিকভাবে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যাতে ক্লাস টা শেষ করে তাড়াহুড়ো করে আমাকে গিয়ে দোকানে বসতে হবে- আমাকে গিয়ে টিউশন করাতে হবে। আমাকে গিয়ে মাঠে কাজ করতে হবে- এই প্রয়োজনটা যাতে তার না থাকে। অর্থাৎ প্রথমেই তাকে কমফোর্টটা দেওয়া। অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে তাকে সাপোর্ট দেওয়া।’
তিনি জানান,আমরা শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক লিখতে জানে, পড়তে জানে এমন কোয়ালিটি নিশ্চিত করার সাথে সাথে তাদের অন্য কোয়ালিফিকেশন নিশ্চিতে কাজ করব। কারণ এসব কোয়ালিফিকেশনের পাশাপাশি অন্যকোনো কোয়ালিফিকেশন না থাকলে টিকে থাকা খুব কঠিন হয়ে যায়। আর এখন দেশের ভেতরে বা বাহিরে যেখানেই বলেন না কেন- কোনো জায়গায় কোনো কর্মসংস্থান খুব প্রতিযোগিতামূলক। নরমালের চেয়ে তাকে অনেক বেশি কোয়ালিটি থাকতে হবে।
প্রাইমারি শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রাইমারি শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেই চেষ্টা করব শিশুদের অন্যান্য আর কি কোয়ালিটি আছে- আমরা বের করে নিয়ে আসা। আমরা ধরেই নিয়েছি আজকে যে প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষার্থী- ভবিষ্যতে সে বড় কিছু একটা হবে। সে যাতে বড় কিছু হতে পারে তার জন্য সেটা আমাদের চেষ্টা করতে হবে। এখন সে দেশেই থাকুক আর বিদেশেই থাকুক।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, আমাদের যে পরিকল্পনা আছে- প্রাইমারি, মাধ্যমিক থেকে আমরা প্রথমেই ভাষার ওপর জোর দিব। বাংলা আমাদের ভাষা, আমরা বাংলায় বলছি। স্কুলের সিলেবাসের ইংরেজি আছে, আমরা এর ওপর আরও জোর দেওয়ার চেষ্টা করব। ইংরেজি ভাষাটাকে আরও বেশি রিচ করার চেষ্টা করব। তারপরে আমরা থার্ড একটা ভাষা তার ভেতর আমরা আনতে চাই। হতে পারে চাইনিজ বা ম্যান্ডারিন। ম্যান্ডারিনের প্রয়োজনীয়তা এখন খুব বেশি। জার্মান, ফ্রান্স, ইতালি, অ্যারাবিক- এগুলো- ছয় থেকে সাতটা ভাষা থাকবে।
ভাষা শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, সে প্রাইমারি হয়ত দুই তিন বছর জার্মানি শিখল। তারপরে সে মাধ্যমিকে গিয়ে আরেকটা ভাষার ওপর গুরুত্ব দিল। একটা বাচ্চা যদি বড় হতে হতে মিনিমাম যদি চারটা ভাষার ওপর তার দক্ষতা থাকে- তাহলে সে বিশ্বের যেখানেই যাবে সে মোটামুটি কোনো কিছু একটা করে ফেলতে পারে। কারণ ভাষাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের খেলাধুলার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা শিশুই কিন্তু খেলাধুলা বিষয়ে আগ্রহী। কেউ ব্যাডমিন্টন, কেউ ফুটবল, কেউ ক্রিকেট, কেউ বাস্কেটবল, কেউ ভলিবল- সে ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক। আমরা ছেলে ও মেয়েদের স্পোর্টস উপযোগী খেলাধুলায় তাকে দিয়ে দিব। এই স্পোর্টস সে তার পছন্দ অনুযায়ী নিয়ে নিবে। কিন্তু তাকে এটা খেলতে হবে। মানে এটাতে তার পাশ ফেলের মতো নাম্বার থাকবে। সে যখন খেলাধুলা করবে. তখন সে কিন্তু ফিজিক্যালি অনেক স্ট্রং হবেন। তখন সে মেন্টালিও স্ট্রং হবে। এটা গেল একটা।
সাংস্কৃতিক বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকেরই কমবেশি কালচারাল গুণ থাকে। এটিকে আমাদের বের করে নিয়ে আসতে হবে। আমরা স্কুলে যেটা রাখতে চাইছি, সেটা হতে পারে কোনো না কোনো বাদ্যযন্ত্র বা গান, ক্রাফট কোনো না কোনো একটা শিখতে হবে। একটা জিনিস আমরা পরিচয় করিয়ে দিতে চাইছি, এই বিষয়টি নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা আছে- মতামত আছে। আমরা প্রায় বলি আমাদের বক্তব্যে আমরা একটি মানবিক সমাজ গড়তে চাই। আমরা একটি মানবিক সমাজ গড়তে চাই। মানুষের মধ্যে মায়া থাকতে হবে।
শিশুদের মধ্যে মানবিকতার গুণ তৈরি করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি গ্রুপ করে নিবে। তারা সিদ্ধান্ত নিবে কেউ হয়ত একটি বিড়াল, কেউ হয়ত একটা ছাগল, কেউ একটা মুরগি, কেউ হয়ত একটা ছাগল, কেউ একটা হাঁস পালতে হবে। সে এটার যত্ন নিবে, সে এটাকে বড় করে তুলবে। সে এটার দেখভাল করবে। আমরা ধারণা করছি, এর ফলে তার মধ্যে মানবিক গুণটা বৃদ্ধি পাবে। সেটা মানুষের প্রতি মানুষের হোক, প্রকৃতির প্রতি মানুষের হোক। অর্থাৎ তার ভিতরে মানবিকতার বিষয়টি উঠিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
এমন শিক্ষা বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, আর এসব করতে পারলেই আমাদের শিক্ষাটা উৎপাদনমুখী হয়ে উঠবে। আর এটার ফল দুই একবছরে পাওয়া যাবে না। সে যখন কর্মস্থলে তখন এটার ফলাফল পাওয়া যাবে।