২৬ বছরে সিংহাসন আরোহণ, ব্রিটেনে রাজত্ব করেছেন ৭০ বছর
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৫ PM , আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:২৫ PM
৭০ বছর রাজত্ব করার পর যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৯৬ বছর বয়সে মারা গেছেন।বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তার স্কটিশ এস্টেটে মারা যান। তার মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেছেন তার পুত্র রাজা তৃতীয় চার্লস।
রানী ১৯৫২ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেনে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার আগমনে বিশাল সামাজিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয় ইতিহাস। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনামলে যুদ্ধ-পরবর্তী কঠোরতা, সাম্রাজ্য থেকে কমনওয়েলথে উত্তরণ, স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি, ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের প্রবেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে প্রত্যাহার এই সকল স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে।।
রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনামলে ১৮৭৪ সালে জন্মগ্রহণকারী উইনস্টন চার্চিল থেকে শুরু করে ১০১ বছর পরে ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণকারী লিজ ট্রাস সহ ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
রানী ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনের মেফেয়ারে জন্মগ্রহণ করেন এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসরের। তখন কেউ কল্পনাও করেনি তিনি যুক্তরাজ্যের সিংহাসনে বসবেন। কিন্তু ১৯৩৬ সালে যখন তার চাচা অষ্টম এডওয়ার্ড দুইবার তালাকপ্রাপ্তা ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করার জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেন তখন এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ সিংহাসনে বসলে তখন এলিজাবেথের উত্তরাধিকার সূত্রে সিংহাসন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
এলিজাবেথের যখন ১০ বছর তখন থেকেই তার পরিবার মানতো সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী হবেন এলিজাবেথ। ১৮ বছর বয়সে অক্সিলিয়ারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিসের সাথে পাঁচ মাস সময় কাটানোর পর মৌলিক মোটর মেকানিক এবং ড্রাইভিং শিখেন এলিজাবেথ। ১৯৪৭ সালে জার্মান নাৎসি বাহিনীর সাথে যুদ্ধ চলাকালীন তিনি তার দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাই ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনকে বিয়ে করেছিলেন, যিনি পরবর্তীতে এডিনবার্গের ডিউক হন।
তাদের প্রথম পুত্র, চার্লস, ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন, ১৯৫০ সালে প্রিন্সেস অ্যান , ১৯৬০ সালে প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং প্রিন্স এডওয়ার্ড জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৪ সালে।
প্রিন্সেস এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে যখন কেনিয়াতে অসুস্থ রাজার প্রতিনিধিত্ব করছিলেন, তখন তার বাবা মারা যান। এমতাবস্থায় নতুন রানী হিসাবে লন্ডনে ফিরে আসেন রাণী এলিজাবেথ। তখন তিনি ছিলেন মাত্র ২৫ বছর বয়সী এক রাজকুমারী।
১৯৫৩ সালের জুনে, এলিজাবেথকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে মুকুট পরানো হয়। এই অল্প বয়সে রাজকার্য হাতে নিয়েও রাজতন্ত্রের সংস্কার করেছিলেন তিনি। যদিও ব্রিটেন তখনও যুদ্ধ-পরবর্তী কঠোরতা সহ্য করছিল, কিছু বিশ্লেষকরা এই রাজ্যাভিষেককে একটি নতুন এলিজাবেথ যুগের শুরু বলে বর্ণনা করেছিলেন।
১৯৫৭ সালে জাতিকে প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে প্রচারিত ক্রিসমাস ডে সম্প্রচার করেছিলেন রানী এলিজাবেথ।
ব্রিটিশ সমাজ এবং রাজতন্ত্রের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হচ্ছিল এবং 'রাজতন্ত্র' শব্দটি ধীরে ধীরে 'রাজকীয় পরিবার' দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। তবে এত ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারের সাথে সময় কাটাতে ভুলতেন না তিনি।
১৯৬৬ সালের ২৯ অক্টোবর মাসে কয়লার টিপ ভূমিধসে প্যান্টগ্লাস জুনিয়র স্কুলে ১৪৪ জন নিহতের ঘটনায় ওয়েলশ গ্রাম আবেরফান পরিদর্শন করেন রাণী যা তার রাজত্বের আবেগপূর্ণ মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি ছিল।
১৯৬৯ সালে রাণীর পরিবার নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি সম্প্রচারিত হয় যা দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল।
১৯৭৭ সালে সিংহাসন আরোহণের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশ ভ্রমণ করেছিলেন তিনি।
১৯৮১ সালে, এলিজাবেথের বড় ছেলে চার্লস লেডি ডায়ানা স্পেনসারকে বিয়ে করেন। পেরে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিবাহবিচ্ছেদের আগে চার্লস এবং ডায়ানার দুটি পুত্র ছিল, উইলিয়াম এবং হ্যারি। ১৯৯৭ সালে প্যারিসে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ডায়ানা।
রাজকুমারী ডায়ানার মৃত্যুর পর, জনসমক্ষে উপস্থিত না হওয়ায় সমালোচনার সম্মুখীন হন রাণী। পরে তিনি বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
২০০২সালে মাত্র সাত সপ্তাহের ব্যবধানে রানী তার বোন, প্রিন্সেস মার্গারেট এবং তার মা কে হারান।
২০০৫ সালে, রানী এলিজাবেথের বড় ছেলের দ্বিতীয় বিয়ে সম্পন্ন হয়।
পরবর্তী বছরগুলোর মধ্যে রাণীর সবচেয়ে আনন্দের ঘটনা হল ২০১১ সালে তার নাতি প্রিন্স উইলিয়ামের সাথে ক্যাথরিন মিডলটনের বিয়ে।
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫সালে, এলিজাবেথ ২৩,২২৬দিন, ১৬ ঘন্টা এবং আনুমানিক ৩০ মিনিট রাজত্ব করেছিলেন - যা তার প্রপিতামহ রানী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বকে অতিক্রম করে। এদিন তিনি স্কটল্যান্ডে একটি নতুন রেলপথ উদ্বোধন করেন।
২০১৬ সালের জুন মাসে রাণী রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে তার জন্মদির উদযাপন করেন। তখন তার বয়স ছিল ৯০ বছর। ডিউক অফ এডিনবার্গের অবসর গ্রহণের পর প্রায়ই একা রানী তার পাবলিক দায়িত্ব পালন করতেন।
২০২১সোলে ৯ এপ্রির ৯৯ বছর বয়সে রাণী এলিজাবেতের স্বামী প্রিন্স ফিলিপ মারা যান। ছয় দশকেরও বেশি সময় তারা একসাথে ছিলেন।
কমনওয়েলথের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি ছিল অবিচল। অন্তত একবার প্রতিটি কমনওয়েলথ দেশ পরিদর্শন করেছিলেন রাণী এলিজাবেথ। সব সময় পাশে থেকেছেন প্রত্যেকটি কমনওয়েলথ দেশের। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবন ছিল সর্বদা সবার নজরে। তার রাজত্বের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে কিভাবে শিশু থেকে উত্তরাধিকারী পর্যন্ত ব্রিটেনের দীর্ঘতম রাজত্বকারী রানী ছিলেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি