যে শহরে পাহাড়ে ঝুলিয়ে রাখা হয় মৃতদের কফিন!

পাহাড়ে ঝুলে রয়েছে কফিন
পাহাড়ে ঝুলে রয়েছে কফিন  © সংগৃহীত

ফিলিপাইনরে শহর সাগাদা। বহু বছর ধরে পর্যটকদের অন্যতম কৌতূহলের জায়গা কর্ডিলেরা পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট এই শহর। যাকে কেন্দ্র করে রয়েছে বহু রহস্য এবং প্রশ্ন। রহস্য কারণ, সেই শহরের পাহাড় থেকে ঝুলতে দেখা যায় সারি সারি কফিন!

প্রাচীন কালে সাগাদায় কারও মৃত্যু হলে, তাঁর পরিবারের সদস্যেরা মৃতদেহটি কাঠের কফিনে রেখে পাহাড় থেকে ঝুলিয়ে দিয়ে আসতেন বলে মনে করা হয়। কিন্তু তাঁরা কেন এমনটা করতেন, তা এখনও জানেন না সাগাদার বেশির ভাগ মানুষ। লোককথায় যা ছড়িয়ে পড়েছিল, সুধী নাগরিকের মতো তা-ই বিশ্বাস করে নিয়েছেন তাঁরা। সুলুকসন্ধানে যাননি।

ফিলিপাইনের ছোট শহর সাগাদায় এই রীতির উৎপত্তি নিয়ে অনেক জল্পনা এবং অনুমান রয়েছে। সাগাদায় বসবাসকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই সংখ্যালঘু জনজাতির অংশ ছিলেন। যাঁরা সাগাদায় থাকার আগে মাতাংবা নদী উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাস করতেন। মাতাংবার উপকূলে থাকাকালীনই সেই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে এই রীতির প্রচলন শুরু হয় বলে মনে করা হয়। কবরগুলিকে মূলত হিংস্র পশুদের হাত থেকে রক্ষা করতেই নাকি এই পন্থা অবলম্বন করা হত।

চিনের কয়েকটি জায়গায় শেষকৃত্য হিসাবে কফিন ঝুলিয়ে রাখার রীতি রয়েছে। ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন, সাগাদায় কফিন ঝুলিয়ে রাখার রীতি চিনের থেকেই ধার নেওয়া। যে রীতি সম্ভবত অষ্টম শতক নাগাদ শুরু হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুযায়ী, মৃতদের সহজে ‘স্বর্গে’ পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করতেই নাকি তাঁদের কবরগুলি পাহাড় থেকে ঝুলিয়ে রাখা হত। মনে করা হত, এ ভাবে কফিন ঝুলিয়ে রাখলে ‘স্বর্গের সিঁড়ি’ পাবেন মৃতেরা। সাগাদার বসবাসকারীদের পূর্বপুরুষের মধ্যে এই ধারণা প্রচলিত ছিল।

সেই কফিনগুলিকে ফাঁপা গাছের গুঁড়ি দিয়ে পাহাড়ের গা থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হত। গাছগাছড়ার শক্ত দড়ির সাহায্যে সেগুলি বেঁধে রাখা হত। সাগাদায় পাহাড় থেকে ঝুলন্ত কফিনগুলির কয়েকটিতে কাঠের চেয়ার বাঁধা থাকতেও দেখা যায়। মনে করা হয়, এই চেয়ারটি ‘সাঙ্গাদিল’ বা ‘মৃত্যুচেয়ার’।

২০১৫ সালে ইতিহাসবিদরা ৩৩০ ফুট উঁচু পাহাড়ের সামনে প্রায় ১৩০টি ঝুলন্ত কফিন আবিষ্কার করেছিলেন। এর মধ্যে কয়েকটি এমন কফিনও রয়েছে, যেগুলির বয়স ১২০০ বছরেরও বেশি। কয়েকটি কফিন পাহাড়ের উঁচু গুহা থেকেও আবিষ্কার করেন ইতিহাসবিদরা। এগুলি শক্ত করে গুহার মেঝেতে আটকে রাখা হয়েছিল। তবে প্রাচীন কালে কফিনগুলিকে অত উঁচু পাহাড়ে কী ভাবে তোলা হত, তা নিয়ে সঠিক উত্তর জানা যায় না।

অনেকে নাকি মনে করতেন, কফিন মাটির নীচে রাখা হলে সেখানে জল ঢুকে মৃতদেহে পচন ধরতে পারে। এর বদলে কফিন ঝুলিয়ে রাখলে দেহ অনেক দিন অক্ষত থাকবে বলে মনে করতেন তাঁরা। আর সেই কারণেই ওই ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ।

সাগাদার পাহাড়ে যে কফিনগুলি ঝুলতে দেখা যায়, সেগুলির আকার এবং আয়তন একে অপরের থেকে আলাদা। অনেকে মনে করেন, অপেক্ষাকৃত ছোট কফিনগুলি শিশুদের মৃতদেহ রাখার জন্য বানানো হত। পাহাড়ের ঝুলন্ত কফিনগুলি দেখতে প্রতি বছর বহু মানুষ সাগাদায় যান। স্মৃতি হিসাবে কেউ কেউ কফিন থেকে হাড় নিয়েও চলে আসেন। প্রশাসনের তরফে ঝুলন্ত কফিনগুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। সাগাদার মৃতদের কবর কফিন ঝুলিয়ে দেওয়ার এই অদ্ভুত ঐতিহ্য বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বলে মনে করা হয়।

মনে করা হয়, মিং রাজবংশের সেনাবাহিনী সাগাদার এই জনজাতিকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল। তখনই নাকি সেই প্রথা হারিয়ে যায়। তবে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সেই জনজাতির কয়েক জনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল।

 

সূত্র: আনন্দবাজার


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence