বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অসুস্থ মানসিকতা জেঁকে বসেছে—ভিসি হতে হবে নিজেদের শিক্ষককে

কামরুল হাসান মামুন
কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটা অসুস্থ মানসিকতা জেঁকে বসেছে সেটা হলো ভিসি হতে হবে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক শিক্ষককে। পৃথিবীর অনেক সেরা সেরা এমনকি অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, এমআইটি বা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিশ্ববিদ্যালয়েও নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহির থেকে নিয়োগ দেওয়ার বহু উদাহরণ আছে। তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থী সেটা না দেখে যোগ্য মানুষ খোঁজে। 

নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগের একটা ক্ষতিকর দিক হলো ভিসি সব শিক্ষককে চেনে। এই চেনার কারণে কারো প্রতি রাগ আবার কারো প্রতি অনুরাগ থাকে। এই রাগ অনুরাগ রাজনৈতিক কারণে হলে ক্ষতিটা আরো বেশি হয়। আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যেই গ্লোবাল নিয়মনীতি অনুসরণ করছে। ব্র্যাক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি ইতোমধ্যেই বিদেশি শিক্ষককে ভিসি বা প্রোভিসি হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল বিদেশি ভিসি দিয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে ভালো করেছে তার আমলেই। ভালো করা সত্ত্বেও এরপর গত ১০০ বছরেও আর কোনো বিদেশিকে ভিসি নিয়োগ দেয়নি। বিদেশি না দিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিখ্যাত ও যোগ্য বিদেশীকেও নিয়োগ দেওয়া যেত। সেটাও করা হয় না। আমার বিশ্বাস এখন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিখ্যাত ও যোগ্য বিদেশি কাউকে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ দিলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মারাত্মক বিরোধিতা করবেন। 

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। ৭৩-এর অধ্যাদেশের আলোকে ভিসি নিয়োগের প্রক্রিয়া দিয়েই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচন ঢুকেছে। এমনকি ডিনের মত অ্যাকাডেমিক পদও নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগ হয়। নির্বাচন দিয়ে একাডেমিয়াতে কোনোদিন যোগ্য মানুষ পাওয়া সম্ভব না। নির্বাচন মানেই অযোগ্যদের এগিয়ে যাওয়া। নির্বাচন মানেই মন জুগিয়ে চলা।

আরো পড়ুন: কলেজ ছাত্রদল সভাপতি ভর্তিই হননি, সাধারণ সম্পাদকের ছাত্রত্ব নেই

একাডেমিয়াতে মন জুগিয়ে চলতে গিয়েই আমাদের শিক্ষক প্রমোশন নীতিমালাকে দিনদিন সহজ করে ফেলেছি। অথচ অ্যাকাডেমিয়া নিয়ম নীতিমালা দিনদিন কঠোর করে শিক্ষক ও গবেষকদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়। এইটা অনেকটা উচ্চ লাফ প্রতিযোগিতায় উচ্চতার বার যেমন আস্তে আস্তে উপরে উঠাতে হয়, অ্যাকাডেমিয়া প্রমোশন নীতিমালাও ঠিক তাই। কিন্তু আমরা করেছি উল্টো। করতে করতে এমন জায়গায় এসে গেছি যে, যেই যোগ্যতা দিয়ে বিশ্বে কোথাও যেখানে সহকারী অধ্যাপকও হওয়া যায় না সেখানে আমাদের এখানে অধ্যাপক, ভিসি, ডিন সব হওয়া যায়।

মন্ত্রণালয় কী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগের সুপারিশ করে? মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোন ভালো কিছু হয়েছে এই উদাহরণ কি আছে? নতুন নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা দেখে আমি আশ্চর্য। কোন যোগ্যতায় এদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বা হয়? শোনা যায় অর্থ এবং দলান্ধতার ভিত্তিতেই এইসব ছোটখাটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ হতো। এই মন্ত্রণালয়ের কারণে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের শক্তি ধ্বংস করা হয়েছে। এই মন্ত্রণালয়ের কারণে বাংলাদেশ কাউন্সিল অফ সাইন্টিফিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ যাকে আমরা সায়েন্স ল্যাব বলি সেটা কখনো দাঁড়াতেই পারেনি।


সর্বশেষ সংবাদ