ইসলামে নারীর অধিকার, বাংলাদেশের বাস্তবতা

  © টিডিসি সম্পাদিত

পবিত্র কুরআন নাজিল হওয়ার পূর্বে আরব্য সমাজে কোনো পিতা-মাতা কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে অপমানজনক বলে মনে করা হতো। সমাজে নারীদের কোনো মর্যাদা না থাকায় কেউ কেউ কন্যা সন্তানকে হত্যাও করে ফেলত। আধুনিক সমাজব্যবস্থায় কন্যা সন্তানকে হত্যা না করে আশির্বাদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্বামী মারা স্ত্রীকে অগ্নিকুণ্ডে হত্যা করা হয় না।

বিধবা বিবাহ বৈধতা দেয়া হয়েছে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু বিবি খাদিজা (রাঃ) কে বিবাহ করে ছিলেন, তিনিও বিধবা নারী ছিলেন। বর্তমানে নারী নেত্রীরা বিশ্বের অনেক দেশেই রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, তাকে যিনি প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে বন্দী রেখেছিলেন তিনিও একজন নারী প্রধানমন্ত্রী, যিনি সর্বশেষ গণহত্যা করে ভারতে পালিয়ে যান।

ইদানিংকালে তৌহিদী জনতা নামে উগ্রবাদী গোষ্ঠী ইসলামের নাম ব্যবহার করে নারীদের উপর হামলা শুরু করেছে। তারা কৌশল হিসেবে মব জাস্টিষ বলে প্রচার করতেছে। আধুনিক বিশ্বের কোথাও মব জাস্টিষ এর নাম করে এভাবে হামলার ঘটনা বাংলাদেশ ব্যতীত বিরল। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অনেকাংশে নিরব ভূমিকা পালন করছে।

আরও পড়ুন: ঢাবির হিজাব-নিকাব পরিহিত ছাত্রীদের পরিচয় শনাক্তে নতুন সিদ্ধান্ত

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারীকে কটুক্তি করে বিব্রত করা হয়েছে ওড়না সঠিকভাবে পরিধান না করায়। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার সেই নারীর সুবিচার নিশ্চিত করতে গড়িমসি দেখা যাচ্ছে। সেই নারীকে হেনস্থাকারীর পক্ষেও দাঁড়িয়েছে একটি গোষ্ঠী, তারা থানায় গিয়ে অপরাধীকে ছেড়ে দিতে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। 

পর্দার নারীদের রক্ষা করা ফরজ, এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের  উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহযাব: ৫৯)।

বর্বরতার অন্ধকার যুগেই ইসলাম ধর্মই নারীদের প্রতি অমানবিক নির্যাতন নিষিদ্ধ করে বিপরীতে মর্যাদা দিয়েছে। কোরআন মেনে ইসলাম ধর্ম যিনি প্রথম গ্রহণ করেন তিনিও একজন নারী। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর যখন জিব্রাইলের (আঃ) এর মাধ্যমে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে তিনি বাসায় এসে জ্বরাক্রান্ত হয়ে পরেন। নবীজী সবকিছু সহধর্মিণী খাদিজা (রাঃ) কে সবকিছু খুলে বললে তিনি এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস করেন। হযরত খাদিজা (রাঃ) প্রথম ব্যক্তি এবং প্রথম নারী হিসেবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং কোরআনের আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করেন।

এই উগ্রবাদী গোষ্ঠী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অযুহাতে নারীদের উপর নির্মমভাবে অত্যাচার করেছে। যার জলজ্যান্ত উদাহরণ দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক মানসুরা আলম এর উপর নির্মমভাবে হামলা করে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হাত ভেঙে ফেলা হয়েছে। এরকম ঘটেছে ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তন্বী মল্লিককে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে নির্মমভাবে পিটিয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রেখেছে। এই জাতীয় নির্মম নির্যাতন কেবল ঢাকায় সীমাবদ্ধ না থেকে সমগ্র বাংলাদেশ চলছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল নওরীন উর্মি কে পান থেকে চুন খসে পড়ার অপরাধ ব্যতীত কাঁটা কম্পাস দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং গলা কেটে হত্যা করার চেষ্টা করা হয় প্রকাশ্য।

জোরজবরদস্তি করে অন্যের ওপর নিজের চিন্তা বা ধর্মাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার বিধান ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইসলামে ধর্মীয় বিধান পালন করতে যেমন বাধ্যবাধকতা রয়েছে তেমনি ব্যক্তি স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হ্যাঁ, ইসলামে সুন্দর উপদেশের কথা বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করো।’ [সুরা নাহল, আয়াত: ১২৫]

সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং বাস্তবতার আলোকে সুস্থ ধারার সমাজ গড়তে নারীর প্রতি সহিংসতা পরিহার করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নাগরিক সচেতনতা খুবই প্রয়োজন।

লেখক: সাবেক গণসংযোগ সম্পাদক, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ


সর্বশেষ সংবাদ