সংস্কারের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় আগে গুরুত্ব দিতে হবে
- সর্দার আমিরুল ইসলাম সাগর
- প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৩ PM , আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৬ PM

নব্বই দশকে গ্লাসনস্ত (উন্মুক্ততা) এবং পেরেস্ত্রোইকা (পুনর্গঠন) সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে পেরেস্ত্রোইকা (পুনর্গঠন) বা সংস্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্মস। বলতে সমস্যা নাই, বাংলাদেশের আগামী ৩০ বছরের রাজনীতি হবে সংস্কারের রাজনীতি। এই সময়ে কতটুকু সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে তার উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডের দেশ হয়ে উঠবে নাকি আফগানিস্তান হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কারের আলাপ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও গ্লাসনস্ত মানে উমুক্ততা বা দল সংস্কারের কোন আলাপ নাই। কিন্তু এটাই বেশি জরুরি। দলীয় প্রধান কারা হবেন, তারা কীভাবে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে উঠবেন এ ব্যাপারে উমুক্ততা অতি জরুরি। মোটাদাগে অভিজাত বা সামাজিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা এবং সম্পদের বণ্টন কীভাবে হবে, কে শাসন করবেন এবং কোন নিয়মে শাসন করবেন সেটি নির্ধারণ করতে হবে।
রাজনৈতিক বন্দোবস্ত না করা পর্যন্ত সংবিধান, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ প্রভৃতি সংস্কারের আলাপ বৃথা। সংস্কার করতে হবে একদম গোঁড়াতে, অল্প মাত্রায় কিন্তু কার্যকরীভাবে। আমার দৃষ্টিতে মাত্র তিন সেক্টরে ৮টি পয়েন্টে সংস্কার করলেই বাংলাদেশে গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রোইকা সম্পূর্ণ হবে।
রাজনৈতিক দল সংস্কার
১. আঞ্চলিক বা বিভাগীয় রাজনৈতিক দল চালু করতে হবে। অঞ্চল বা বিভাগের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলা কিংবা এক-ষষ্ঠাংশ উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানাতে অফিস থাকতে হবে এবং প্রতিটি উপজেলায় দলের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকতে হবে। আঞ্চলিক বা বিভাগীয় রাজনৈতিক দল কেবলমাত্র স্ব স্ব অঞ্চল বা বিভাগের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।
২. দলীয় প্রধান পার্লামেন্টারি বোর্ড এবং সরকার প্রধান হতে পারবেন না।
৩. রক্ত ও বৈবাহিক সূত্রে ‘ফাস্ট ব্লাড রিলেটিভ’ পর পর দলীয় প্রধান হতে পারবে না। দলীয় প্রধান তথা- স্বামী/স্ত্রী, পুত্র/কন্যা, ভাতিজা/ভাতিজি/ভাগ্নে/ভাগ্নি, ভাই/বোন-শ্যালক/শ্যালিকা/দেবর/ননদ, বাবা/মা-শ্বশুর/শাশুড়ি।
নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার
১. প্রতীক বিহীন নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
২. সাধারণ কক্ষের সংসদ সদস্য প্রার্থী ৩৩% ভোট পেয়ে নির্বাচনে পরাজিত হলেও উচ্চ কক্ষ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসাবে বিবেচিত হবেন।
৩. রাষ্ট্রপতি এবং সংসদ সদস্য পদে একদিনে একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সরকার ব্যবস্থা সংস্কার
১. রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সংসদ হবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট- উচ্চ কক্ষ ও সাধারণ কক্ষ। দ্বিকক্ষ ধারণায় মার্কিন বিস্তারিত আলোচনা দাবি রাখে।
২. সাংবিধানিক ৮ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কমিশন গঠন করে দিবেন। কমিশন প্রতি পদের বিপরীতে ৬-১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবেন। সংসদ সদস্যগণ প্রত্যক্ষ গোপন ভোট দিয়ে সুপারিশকৃত বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ থেকে সাংবিধানিক ৮ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা, ঢাবি।