শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গিয়ে ফের আহত জবি শিক্ষক নাসির

২০২৫ সাল ও ২০১৪ সালে আহত হন জবি অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমদ
২০২৫ সাল ও ২০১৪ সালে আহত হন জবি অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমদ  © টিডিসি সম্পাদিত

তিন দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনা অভিমুখে লংমার্চ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার, হাইকোর্ট মোড় ও মৎস ভবনে মোড়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিউট পার হলে কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড় থেকেই পুলিশ টিয়ারশেল ও জলকামান নিক্ষেপ করে। এমনকি শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমদ, পাঁচ শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। 

আজ বুধবার (১৪ মে) বেলা ১১টার দিকে কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড় ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মাঝামাঝি জায়গায় শিক্ষার্থীদের ওপর বলপ্রয়োগ করে।

আহত ছয় শিক্ষক হলেন, ইসলামিক স্টাডিজের বিভাগের অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমদ, শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নইম সিদ্দিক ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিফাত হাসান। 

আরও পড়ুন: বৃষ্টিতেও সড়ক ছাড়েননি জবি শিক্ষার্থীরা, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

এদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর বলপ্রয়োগের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেটিজনরা। এ ছাড়াও শিক্ষক নাসির উদ্দীন আহমদের ওপর হামলার ঘটনায় অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন, করছেন নানা মন্তব্য। 

রাজ আহমেদ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শ্রদ্ধেয় নাসির স্যার, যিনি ছাত্রদের প্রতিটি আন্দোলনে সবার আগে বুক-পিঠ পেতে দিয়েছেন বু-লে-ট,বে-য়-নে-ট এর সামনে। হয়েছেন লাঞ্ছিত ও ক্ষত-বিক্ষত কিন্তু ঠেকানোর সাধ্য আছে কার? ২০১৪ সালে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ঘাম ঝরিয়েছেন আর ২০২৫ সালেও থামানো যায়নি ছাত্র বান্ধব, পিতৃতুল্য এই শিক্ষককে।’

সানাউল হক সানি নামে এক সংবাদকর্মী ফেসবুকে লিখেছেন, ‌‘জগন্নাথের নাসির স্যার, অদ্ভুত একজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের ইংরেজি পড়ান। পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই প্রশাসনের রোষানলে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন। শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের পাচনবাড়ি খান। বু-লেট, বে-য়নে-টের সামনে বুক-পিঠ পেতে গুলিবিদ্ধ হন। টিয়ারশেলে আহত হন। একবার/দুইবার না, এমন ঘটনা অসংখ্য।

আরও পড়ুন: লং মার্চে জবির ছয় শিক্ষক আহত, ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

তিনি আরও লেখেন, ‘২০১৮ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল সম্পূর্ণ অন্যায্যভাবে। পরে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ফেরত পান চাকরি। কিন্তু এই শিক্ষক দমে যাননি। যখনি কোনো যৌক্তিক দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাজপথে দাঁড়িয়েছেন, ঢাল হয়ে পাশে ছিলেন নাসির স্যার। আজকেও বরাবরের মতই ছিলেন শিক্ষার্থীদের পাশে। এসব শিক্ষকদের দেখলেই শ্রদ্ধা আসে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়টা আসলেই অবহেলিত। হল নেই। ছোট ক্যাম্পাস। নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণে লেগে যাচ্ছে বছরের পর বছর। ইউজিসির আবাসন ভাতার পাইলটিং প্রজেক্টে শুরুর দিকেই জগন্নাথের নাম রাখা উচিত ছিল। বাৎসরিক বরাদ্দটাও তুলনামূলক কম। শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। হামলা-নির্যাতন নয়, যৌক্তিক দাবি মেনে নিন।’

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আমলে চাকরি হারান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমদ। ছয় বছর পর অর্থ্যাৎ ৫ আগস্টের পর চাকরি ফেরত পান তিনি। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতে সাড়া দেয়ায় বারবার তাকে পড়তে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রোষানলে। তবে তাকে ‘শামসুজ্জোহা’ নামে ডাকেন জবির শিক্ষার্থীরা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে সবার আগে থাকেন বলে তাকে এই নামে ডাকেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। 

এর আগে ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে হল উদ্ধার আন্দোলনে নামলে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের  আন্দোলনে পুলিশ হামলা করে। সেসময় ওই শিক্ষক ত্রিশের অধিক ছররা গুলিতে আহত হয়েছিলেন। আর ২০১৬ সালে জবির হল আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ