শিক্ষকরাই রাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবী এবং মানুষ গড়ার মিস্ত্রি
- গাজী সালাহউদ্দীন মুহাম্মদ
- প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ AM , আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ AM
একটা উদ্দীপ্ত উজ্জীবিত গণকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে দেশ। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে শিক্ষকদের। শিক্ষকরা যে আদর্শ ব্রত ধারণ করে গড়ে তোলে তিলতিল করে শিক্ষার্থীদের-পরবর্তীতে সর্বস্তরে শিক্ষার্থীরা আত্মনিয়োগ করে সেবাধর্মে। সুদীর্ঘ দুঃশাসনের চক্রে একশ্রেণীর শিক্ষক নামধারী সুবিধাভোগী দুর্বৃত্ত শিক্ষকতার আদর্শ ও ব্রতকে বেমালুম ভুলে গিয়ে ইন্ধন যুগিয়েছে অপশাসনের স্ফুলিঙ্গে!
অতঃপর রাষ্ট্রজুড়ে নৈরাজ্য দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়ন স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের ভয়াল সংস্কৃতি কেবলই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সর্বগ্রাসী লেলিহান শিখার মতো। মেরুদণ্ডহীন শিক্ষকদের স্তুতিবাদে ক্ষমতাসীনরা অকপটে অস্বীকার করেছে জবাবদিহিতা, রাষ্ট্রের সকল বিভাগ ও বাহিনীও মেতেছিল যথেচ্ছাচারে- দলীয় আনুগত্যে! বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অপরাজনীতির নষ্টসংস্কৃতির পতিত ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল।
ভিসি নিয়োগ থেকে শুরু করে শিক্ষক কর্মচারী পর্যন্ত অধিকাংশ নিয়োগই হয়েছে দল ও অর্থের যুগলবন্ধনে। অবশেষে সম্ভবত আর কেনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাকি ছিলো না- তথাকথিত রাজনীতিকদের সঙ্গে আঁতাত করে, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার আচরণের বারোটা বাজিয়ে ভাঁড়েদের আখড়ায় পরিণত করতে!
সেইসব ঘনঘোর অন্ধকার অতিক্রম করে রাষ্ট্রকে সুন্দর করে সাজাতে, গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে এখনও সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষকদেরই। শিক্ষকরাই তো সবাইকে তৈরি করে রাজনীতিবিদ থেকে কেরানি এমনকি পাড়ার মুদি দোকানিকেও। জমানো জঞ্জাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে এই পরিবর্তিত সময়ে শিক্ষার্থীদের রক্তরঞ্জিত শপথ বাস্তবায়নে, গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন দুর্নীতিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক জ্ঞানমূখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে- শিক্ষকদের ফিরতে হবে শিক্ষকতার মূলমন্ত্রে।
বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল থেকে তৈরি করবে গণমানুষের স্বপ্নসমৃদ্ধ উন্নত উদার বোধসম্পন্ন নাগরিক। আমূল পাল্টে যাবে আগামীর বাংলাদেশ। এজন্য রাষ্ট্রকে শিক্ষকদের পাশে থাকতে হবে, শিক্ষকদের মর্যাদা যেনো ক্ষুণ্ণ না হয়, কোনো অন্যায়ের কাছে যেনো মাথা নোয়াতে না হয়। শিক্ষক তাঁর কাজ করে যাবে নির্ভয়ে, শিরদাঁড়া সমুন্নত রেখে আপনভূবনে।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিভিন্নস্থানে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে শিক্ষকদের! ( আমি নিশ্চিত এইসব যারা করছে তারা বোধবুদ্ধি বিবর্জিত অকালকুষ্মাণ্ড অপদার্থ ছাড়া আর কিছু না।) যদি কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এবং দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে থাকে- তাঁকে আইনানুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করা হোক। কোনোভাবেই প্রদর্শিত আচরণ শোভনীয় নয় বরং ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী ও গর্হিত, অপরিণামদর্শী।
শিক্ষক নেতাদের এতদিনের তৈলাক্ত আচরণের যে ধারাবাহিতা সেখান থেকে খোলনলচে বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে কাজ করতে হবে অভ্রস্পর্শী মর্যাদা সমুন্নত রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়ে। কোনো দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করে আর যেনো শিক্ষকতার নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি অমর্যাদা ও স্তুতিবাদে পর্যবসিত না হয় মহান শিক্ষাব্রত।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, দেশের বিভিন্নস্থানে যে বিচ্ছিন্ন নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে শিক্ষকলাঞ্ছনার ঘটনা মঞ্চায়িত হচ্ছে- তা কলঙ্কিত করছে গণঅভ্যুত্থানকে; বিতর্কিত করছে গণমানুষের বিপ্লবী সরকারব্যবস্থাকেও। এ নৈরাজ্য থামান এবং জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করুন।
লেখক: গাজী সালাহউদ্দীন মুহাম্মদ, সহকারী শিক্ষক আনুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশাশুনি, সাতক্ষীরা।