বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়তে দরকার ট্যালেন্ট হান্ট

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন   © ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ নাকি বাতিল হয়েছে। দারুন সুসংবাদ। না হয়ে থাকলে এখনই বাতিল করা উচিত। এ রকম অভিনব কোন ফেলোশিপ থাকারই কথা না। সরকার আমলাদের দিয়ে নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ারিং করিয়ে বিনিময়ে তাদের নানাভাবে favor দেওয়ার একটি উৎকোচ হলো এই প্রধানমন্ত্রীর ফেলোশিপ। তেমনি শিক্ষকদের জন্যও একটি ফেলোশিপ আছে, যার নাম বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ। সরকারি কর্মকর্তাদের জনগণের ট্যাক্স থেকে একেকজনকে কয়েক কোটি টাকার প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ দিয়ে বিদেশে মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে পাঠানো হয়। 

মানে আমার দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকা নিয়ে বিদেশে যাবে, সেখানকার কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফী দিবে, গবেষণা করবে। এতে সেই দেশ আর্থিকভাবে এবং গবেষণায় লাভবান হলো। পৃথিবীতে কোনও সভ্য দেশ এমন করতে পারে না। তার বদলে এ টাকা দিয়ে নিজ দেশে শক্তিশালী পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করা অধিকতর সাশ্রয়ী এবং দেশের জন্য মঙ্গলজনক। 

পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অত্যন্ত শক্তিশালী পিএইচডি প্রোগ্রাম আছে। সেখানে একজন পিএইচডি ফেলোকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকদের মাসিক বেতনের চেয়েও বেশি অর্থ দেয়, ভালো থাকার জায়গা দেয়। সেখানকার প্রতিটি ইনস্টিটিউটে পোস্ট-ডক আছে, পিএইচডি ছাত্র আছে। শিক্ষক, পোস্ট-ডক ও পিএইচডি ছাত্র মিলে একটা সুন্দর গবেষণা টীম হয়। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও আমরা এমন টিমের ব্যবস্থা করতে পারিনি।

ট্যাক্সের টাকায় ফেলোশিপ দিয়ে বিদেশে পিএইচডি করতে পাঠাতে হবে কেন? যারা সত্যিকারের মেধাবী তারা নিজেরাই বিদেশী স্কলারশিপ নিয়ে দেশের এক টাকাও খরচ না করে পিএইচডি করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব শিক্ষকরা তাই করে। প্রতি বছর অনেকেই ভারতে পিএইচডি করে স্ট্যানফোর্ড, হার্ভার্ড, এমআইটি তে পোস্ট-ডক করতে যায়। 

এটি প্রমাণ করে ভারতের পিএইচডি প্রোগ্রাম কতটা শক্তিশালী। বাংলাদেশে পিএইচডি করে গত ৫৩ বছরে কেউ পোস্ট-ডক ফেলোশিপ পেয়েছে কিনা আমার জানা নাই। দুই একজন পেলেও পেতে পারে। আমার দেশে পার্ট-টাইম পিএইচডি প্রোগ্রামের ব্যবস্থা আছে। এ সুযোগ নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি পেয়ে গিয়েছে। এরকম পিএইচডি আমলারা, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও পেয়েছেন শুনেছি। যেমন চট্রগ্রামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এই কাজ করেছেন।

আরো পড়ুন: আ’লীগ সরকারের নিয়োগকৃত ভিসিদের দেখুন, যোগ্য কেউ ছিল?

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে গড়তে হলে প্রথমেই একটা ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে। এখন আমাদের শিক্ষকদের যে বেতন, সেই বেতনে বিদেশের মেধাবীরা আসবে না। চীন কয়েক বছর আগে সহস্র ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম নিয়ে এমন একটি প্যাকেজ অফার করেছে যে, বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন হার্ভার্ড এমআইটি থেকেও শিক্ষকরা চাকুরী ছেড়ে নিজ দেশ চীনে ফেরৎ গেছে। তাদের অফারে ছিল বিদেশে তারা যেমন বেতন পেত একই বেতন, একই গবেষণা পরিবেশ তৈরী করে দেওয়ার অফার।

মানুষ সে দিকেই প্রবাহিত হয়, যেদিকে সে সুবিধা দেখবে। সুবিধা না দিয়ে কেবল দেশপ্রেমের কথা বললে হবে না। দেশকে সত্যিকারের টেকসই উন্নয়ন ঘটাতে হলে শিক্ষায় বিনিয়োগের বিকল্প নাই। গত সরকার এখানেই ব্যর্থ। তারা আগে মানব উন্নয়ন না করে আগে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে গিয়েছিল। কারণ তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল দুর্নীতি। আগে মানব উন্নয়ন করে সে সোনার মানুষ দিয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন করলে কাজের মান যেমন ভালো হবে একই সাথে দুর্নীতিও কম হবে।

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

(ফেসবুক থেকে নেওয়া)


সর্বশেষ সংবাদ