নওগাঁর স্কুলে হিজাবকাণ্ডের পেছনে কী?

দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়
দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়  © সংগৃহীত

নওগাঁর মহাদেবপুরের দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় এখন আলোচনার তুঙ্গে। হিজাব পরায় শিক্ষিকা মেরেছেন- কয়েকজন ছাত্রীর অভিযোগ মূহুর্তেই ভাইরাল নেট দুনিয়ায়। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শিক্ষিকার বিচার চাইতে গিয়ে স্কুলে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিক্ষিকা আমোদিনী পাল। স্কুলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ঘটনার এমন প্রচার বলে দাবি এই শিক্ষিকার। ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে তিন সদস্যের কমিটি করেছে উপজেলা প্রশাসন। এদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্কুলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয় অর্ধশত বছর পার করেছে। স্কুলটিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন ৩৭৫ জন শিক্ষার্থী।

ঘটনার সূত্রপাত ৬ এপ্রিল। ওইদিন নিয়মিত প্যারেড ও জাতীয় সংগীত শেষ করার পর কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে দাঁড় করান স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক বদিউল আলম এবং শিক্ষক সুনিতা রাণী মণ্ডল। স্কুল ড্রেস পরে না আসায় ছাত্রীদের হাতে বেত্রাঘাত করেন আমোদিনী পাল ও ছাত্রদের শাস্তি দেন বদিউল আলম। এসময় তারা শিক্ষার্থীদের ভৎর্সনা করেন। শাস্তি পাওয়া ছাত্রীদের মধ্যে হিন্দু ছাত্রীও ছিলেন। দুইজন শিক্ষক শাস্তি দিলেও শুধু আমোদিনী পালের বিষয়টিই ভাইরাল হয়।

আরও পড়ুন- পড়া না পারায় ছাত্রকে দিয়ে ছাত্রীর গালে চড় মারালেন শিক্ষক

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে সুমাইয়া বলেন, আমরা স্কুলড্রেসের সঙ্গে হিজাব পরে ছিলাম। ম্যাডাম এসে বলল, তোমরা হিজাব পরে আসো কেন? আমাদের মাস্ক ধরে টানাটানি করেছিল। মাস্ক খুলে দিল, হিজাব ধরে টানাটানি করেছিল। যারা যারা হিজাব পরেছিল সবাইকে মেরেছে। বলছে যে তোমরা হাজিগিরি করতে আসছ, ঘরের ভেতর গিয়ে বোরখা পরে থাকো। স্কুলে পর্দা করা যাবে না, মাথায় কাপড় দেয়া যাবে না। শুধু স্কুলড্রেস পরে আসবে। হিজাব পরবে না, এই বলে আমাদের হিজাব ধরে টানাহেঁচড়া করেছে। মোটা কঞ্চি দিয়ে অনেক মেরেছে। যারা হিন্দু ছিল তাদের এক সাইডে নিয়ে আমাদের বলেছে, তোমরা ওদের মতো করে আসবে। প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করেন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিনও। ভিডিও ভাইরালের পরের দিন স্কুলে হামলার ঘটনা ঘটে।

তবে একই সময়ে উপস্থিত থাকা একাধিক শিক্ষার্থী জানান, হিজাবের জন্য তাদের মারা হয়নি। স্কুল ড্রেস না পরার কারণে তাদের মারা হয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষিকা আমোদিনী পাল বলেন, স্কুল পোশাকে আসতে বারবার সতর্ক করার পরও ওইদিন নিয়ম না মানায় তাদের শাস্তি দেওয়া হয়। এ ঘটনাকেই নেওয়া হয়েছে ভিন্ন খাতে। তিনি আরও বলেন, স্কুলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে একটি পক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছে।

প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমিটি নিয়ে এবং হেড স্যারকে নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। যাতে আমাকে দায়িত্ব না দেওয়া হয়। মেয়েদের শাসন করি, একেবারে নামমাত্র শাসন এটা। হিজাব সম্পর্কে কোনো কথা হয়নি। আমি কেন বলব, আমি তো ২২ বছর এই স্কুলে আছি। সব ছাত্রছাত্রীকে আমার নিজের সন্তান বলে মনে করি।

আরও পড়ুন- সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত—দেখে নিন কোনটি কবে

এ বিষয়ে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওই শিক্ষিকাই যে শুধু মেরেছে এমনটা না, ওই শিক্ষিকার সঙ্গে আরও শিক্ষক ছিল। এই শিক্ষিকা যে চারজন মেয়েকে মেরেছে তাদের একজন হিন্দু। যদি ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক হত তাহলে ওই শিক্ষিকা ওই মেয়েটিকে মারত না।


সর্বশেষ সংবাদ