স্বাধীনতা পদক পাওয়া আমির হামজা ছিলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি

আমির হামজা
আমির হামজা  © টিডিসি ফটো

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন দেশের ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান। এ বছর সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন মাগুরার প্রয়াত চারণকবি মো. আমির হামজা। তিনি স্বাধীনতা পদক পাওয়ায় তার নিজ জেলা মাগুরাতে সুধী সমাজের পাশাপাশি এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

দেশের সর্বোচ্চ খেতাবের সঙ্গে জেলার নামটি জড়িয়ে যাওয়ায় আমির হামজার পরিবারের মতো মাগুরার সাধারণ মানুষ যেমন খুশি হয়েছেন; তেমনি হত্যা মামলার একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তার খেতাব নির্বাচন নিয়ে সুধী সমাজের মধ্যে বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে যেতে বাধা দেওয়ায় অধ্যক্ষকে পেটালো ছাত্রলীগ

মরণোত্তর পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক আমির হামজার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট গ্রামে। ওই গ্রামসহ সারাজেলার মানুষের কাছে তিনি পালাগানের শিল্পী কিংবা কবি হিসেবে পরিচিত। তবে বরিশাট গ্রামে ১৯৭৮ সালে শাহাদত ফকির নামে একজন কৃষক এবং শিল্পী নামে আড়াই বছরের একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সর্বশেষ ২০০৭ সালেও স্থানীয় একটি গ্রাম্য মারামারির ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

বরিশাট গ্রামের নিহত শাহাদত হোসেন ফকিরের ছেলে দিয়ানত ফকির বলেন, গরুতে ক্ষেতের ফসল খাওয়ার ঘটনা নিয়ে হামির হামজার পরিবারের সঙ্গে আমাদের বিরোধ হয়। ওই বিরোধের জের ধরে আমির হামজা এবং তার ভাই রব্বানী সরদারের নেতৃত্বে আমার বাবার উপর হামলা চালানো হয়। তারা নির্মমভাবে আমার বাবাকে কুপিয়ে খুন করে। একই সময়ে সাবান মোল্যার আড়াই বছরের শিশু শিল্পীকে সড়কির আঘাতে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তারা দুই ভাইসহ মোট ৬ জনের কারাদণ্ড হয়। আট বছর জেল খাটার পর ৯১ সালের দিকে বিএনপি সরকার গঠন করলে মাগুরার মন্ত্রী মজিদুল হকের সহায়তায় বেরিয়ে আসেন তারা।

তার এই বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় আরও অনেকের কাছ থেকে। একইসঙ্গে ওই মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাভোগ করেন একই গ্রামের আফজাল মোল্যা। তিনি বলেন, আমির হামজাদের সঙ্গে দল করায় আমি আসামি হয়েছিলাম। এই হত্যা মামলার কারণে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।

২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি কবি মো. আমির হামজা পরলোকে গমন করেন। তার ছেলেদের মধ্যে মো. আসাদুজ্জামান বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। মূলত তার চেষ্টায় কবির কাব্যগ্রন্থগুলো প্রকাশিত হয়। বইগুলো আসাদুজ্জামান দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে উপহার হিসেবে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত হয়নি

জীবদ্দশায় কবি মো. আমির হামজা অনেক গান ও কবিতা লিখেছেন। ২০১৭ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বাঘের থাবা’ প্রকাশিত হয়। কবি জীবিত থাকতেই এই কাব্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। সেখানে ৩৫টি কবিতা এবং ৩৬টি গান আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গ্রন্থটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। এরপর মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ শীর্ষক গানের বইটি কবির প্রকাশিত দ্বিতীয় গ্রন্থ। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন ও তার অবিনাশী রাষ্ট্রদর্শন এখানে উঠে এসেছে। বইটিতে মোট গানের সংখ্যা ৫২টি। এর অধিকাংশই দেশের স্বাধীনতা ও সংস্কৃতি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা।

মাগুরার শ্রীপুরের ‘সারথি কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন বইটি প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব’ নামে আরেকটি বই প্রকাশিত হয়। যেখানে কবি রচিত ৫২টি গান রয়েছে। এছাড়া ‘একুশের পাঁচালী’ নামে প্রকাশিত আরেকটি বই প্রকাশিত হয়। সেখানে ২৫টি কবিতা রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ