ক্যান্সারে মৃত্যুমুখে প্রেমিকা, হাসপাতালেই বিয়ে করলেন প্রেমিক

হাসপাতালের বেড়ে বিয়ে হয় তাদের
হাসপাতালের বেড়ে বিয়ে হয় তাদের  © সংগৃহীত

তাদের দু’জনের পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। একজন পড়তেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে, অপরজন ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশে (ইইউবি)। এরপর জড়িয়ে পড়েন সর্ম্পকে। এসময় স্বপ্ন দেখতেন একসঙ্গে ঘর বাঁধার। সুখ-দুঃখে বাকিটা জীবন একসঙ্গে কাটার।

কিন্তু মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মরণঘাতী রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত। দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার পর ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তার আর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। ইঙ্গিত দেন, বেঁচে না থাকারও। তারপরও ভালোবাসার প্রতিদান দিতে বিয়ে করলেন কক্সবাজারের চকরিয়ায় ছেলে মাহামুদুল হাসান।

চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়ার ফাহমিদা কামাল ইইউবি থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। আর মাহমুদুল হাসান নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পরও সবকিছু জেনে-বুঝেও সম্প্রতি ফাহমিদাকে বিয়ে করছেন তিনি।

এদিকে, বিয়ের পর তাদের এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে মানবতার দৃষ্টান্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন অনেকেই। তাদের দাম্পত্য জীবন সুখী হোক- এই কামনা সকলের।

জানা যায়, একসঙ্গে ঘর বাঁধার আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফাহমিদা। চিকিৎসার এক পর্যায়ে ডাক্তাররা জানান, ফাহমিদার ক্যান্সার হয়েছে। এরপরও মাহমুদুল হাসান সম্পর্ক রাখেন। অভয় দেন, খুব দ্রুত ভালো হয়ে যাওয়ার।

মাহমুদুলের স্থানীয়রা জানান, চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে তিনি। আর তার ভালোবাসার মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত ফাহমিদাকে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটাল থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করান।

এক পর্যায়ে ক্যান্সার আক্রান্ত প্রেমিকাকে বিয়ের জন্য পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেন মাহমুদুল। সিদ্ধান্ত নেন অসুস্থ প্রেমিকাকে তিনি বিয়ে করবেন। সেই মোতাবেক গত বুধবার চট্টগ্রামে হাসপাতালের বেডে তাদের মৃত্যুপথযাত্রী ফাহমিদাকে বিয়ে করেন।

হাসানের সিদ্ধান্ত ফাহমিদাকে যদি মরতে হয়, তাহলে তার বুকে মাথা রেখেই মরতে হবে। বিয়ের দিন কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরেন। আক্দ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দু’জন মিলে কেক কাটে, মালাবদল হয়। খেজুর মিষ্টি খাওয়ানো হয়।

আর ক্ষণিকের জন্য মরণঘাতী ক্যান্সারকে জয় করে ফাহমিদা হয়ে উঠে অন্য এক পৃথিবীর বাসিন্দা। সমস্ত স্বর্গীয় সুখ তাকে ঘিরে রাখে। হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিনগুলো আবার যেন ফিরে পায়। আনন্দে আত্মহারা ফাহমিদার আরো বাঁচতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে হাসানের বুকে মাথা রেখে হাজার বছর বাঁচতে।


সর্বশেষ সংবাদ