ত্রিমুখী অবস্থানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও অভিভাভক-শিক্ষার্থীরা

করোনাকালে ত্রিমুখী অবস্থানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও অভিভাভক-শিক্ষার্খীরা
করোনাকালে ত্রিমুখী অবস্থানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও অভিভাভক-শিক্ষার্খীরা  © ফাইল ফটো

করোনাকালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এমনকি ফি’সহ নানা ইস্যুতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। করোনার কারণে বিভিন্ন ধরনের ফি মওকুফ করার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তবে শিক্ষকদের বেতন দেয়াসহ নানা ধরনের খরচ চালাতে ফি আদায় বন্ধের সুযোগ নেই নেই বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে অচলাবস্থা বাড়ছে। সর্বশেষ বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (এনএসইউ) আন্দোলনও হতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফি আদায়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে, নানা কৌশলেরও আশ্রয় নিয়েছে। অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়ে ফি আদায় করছে। অর্থ পরিশোধ না করলে পরীক্ষায় যুক্ত করা হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ফি পরিশোধে চাপ দিচ্ছে না কিছু প্রতিষ্ঠান। কিছু প্রতিষ্ঠান আংশিক ফি মওকুফ করেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার, যা আরও বাড়বে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে অভিভাবকদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মানবিক হওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে তাতে সায় দেয়নি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। তাদের বক্তব্য, টিউশন ফি আদায় অন্তত ৭০ শতাংশ কমেছে। এমনকি সামর্থ্য আছে এমন অভিভাবকরাও ফি দিচ্ছেন না। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা দেয়া কঠিন হয়ে গেছে। আবার অনেক শিক্ষকের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের তহবিল থাকলেও ফি আদায় না হওয়ার অজুহাতে বেতন-ভাতা দিচ্ছে না। ফলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও অভিভাভক-শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী অবস্থানে সঙ্কট বাড়ছে।

এ অবস্থায় সরকারের দিকনির্দেশনা দেয়ার দাবিও তুলেছেন তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, টিউশন ফি ইস্যুতে শিগগিরই নির্দেশনা জারি করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। শিক্ষা বোর্ড মিলে এটি তৈরি করবে মাউশি। এরপর নির্দেশনা দেয়া হবে।

এ বিষয়ে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম গোলাম ফারুক বলেন, প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। শিগগির মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ সপ্তাহের মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আর ইউজিসি পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যারা চালাচ্ছেন তারা বেশিরভাগ কর্মসংস্থানের মালিক। করোনাকালে জনগণের আর্থিক অবস্থা কারও অজানা নয়। তাই বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় যদি তারা ফি মওকুফ করে, তাহলে তা সবাই স্বাগত জানাবে।

রাজধানীর আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো ফির জন্য বেশি চাপ দেয়া একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন পরীক্ষার নামে প্রতিষ্ঠানটি অর্থ আদায়ে নেমেছে, দাবি করা হচ্ছে সব ধরনের ফি। কোনো কোনো শিক্ষক অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হয়ে অভিভাবককে কঠোর ভাষায় টাকা পরিশোধে বলছেন। তবে একজন শিক্ষক বলেন, কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি আবেদন করে এমপিও নেয়া বন্ধ করেছে। এতে সরকারি বিধিবিধান মানতে হবে না, ইচ্ছামতো চালাতে পারবে প্রতিষ্ঠান। এখন অসহায় অভিভাবকদের আবেদনও মানছে না তারা।

তবে অভিযোগের বিষয়ে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘যে যা দিচ্ছে আমরা নিচ্ছি। ফি না দেয়ায় কেউ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়নি, হবেও না। সরকারি এমপিও নিচ্ছি না, সেজন্য টিউশন ফি আদায়ের বিকল্প নেই। ফি আদায়ে অভিভাবকের ওপর কোনো চাপ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে অনেক অভিভাবক আর্থিক সংকটে। এমন পরিস্থিতিতে টিউশন ফি ও অন্যান্য চার্জ পরিশোধ করা কঠিন। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সদয় নয়। ছয় মাসের টিউশন ফি মওকুফের আদেশ চেয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও প্রতিকার পাইনি, যা খুবই হতাশাজনক।’

এদিকে আন্দোলনের মুখে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চার খাতের ফি মওকুফ করা হয়েছে। ওয়েভার দেয়া হবে টিউশন ফির ১০ শতাংশ। ফলে চলতি সেমিস্টারে ২০ শতাংশ ফি মওকুফ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। করোনা পরিস্থিতিতে আগের সেমিস্টারে টিউশন ফি ২০ শতাংশ ছাড় দিলেও পরের সেমিস্টারে তা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিল শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ