নারী দিবস: নেত্রকোনায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন দুর্গা রবিদাস

  © সংগৃহীত

সমাজের কিছু নারী আছেন, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে গড়ে তুলতে চান সুন্দর সমাজ। তেমনি একজন দলিত পরিবারের মেয়ে দুর্গা রবিদাস। তিনি নেত্রকোনা পৌরসভার মালনী ঋষিপাড়ায় দলিত পরিবারের শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। দুর্গা ঋষিপাড়ার রিপন রবিদাসের স্ত্রী। তার জন্ম টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের বাম্মনশাসন গ্রামে।

দুর্গা রবিদাস জানান, বাম্মনশাসন গ্রামে ২০ থেকে ২৫টি রবিদাস পরিবারের বসবাস। জুতা সেলাই, চামড়া বিক্রি একসময় পরিবারগুলোর প্রধান ব্যবসা থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশ পরিবার সেলুন, মনোহারি দোকানসহ অন্যান্য ছোটখাটো কাজ করে। দুর্গার বাবা মেকানিক্সের কাজ করতেন। দুই বোন, এক ভাই, মা-বাবাকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার। বাবা যা আয় করতেন, তা দিয়ে কোনো রকমে তাদের সংসার চলে যেত। সংসারের অভাব থাকলেও দুর্গার মা নিজের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতেন।

দলিত পরিবারের সন্তানদের গ্রামের অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পড়াশোনা করা খুবই কঠিন ছিল। একে তো সামাজিক বাধা, সেই সঙ্গে আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকায় স্কুলের পোশাক, ভালো জুতা কেনার মতো সামর্থ্য ছিল না দুর্গার পরিবারের। হাজার বাধার মধ্যেও তার বড় ভাই এসএসসি পাস করে সেলুনের কাজ শুরু করেন। দুর্গাও এসএসসি পাস করেন। এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করার পর থেকেই পড়াশোনা করে নিজের পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করে যা পেতেন, তা দিয়ে খুব কষ্ট করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে শুরু করেন। কলেজ ও টিউশনি শেষে রাতে পড়তে বসতেন কুপি জ্বালিয়ে। পরবর্তী সময়ে নেত্রকোনার ঋষিপাড়ার রিপন রবিদাসের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। দুর্গা স্বামীর ঘরে এসে অনার্স পাস করেন। স্বামী রিপন রবিদাস সেলুনের কাজ করেন।

বিয়ের পর স্বামীর এলাকায় এসে নিজ গ্রামের চেয়েও খারাপ অবস্থা দেখেন দুর্গা। জেলা শহরের মালনীতে ১৩৫ দলিত পরিবারের মধ্যে তিন থেকে চারজন ছেলেমেয়ে কলেজ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পাড়ার প্রায় সব মেয়েকে বাল্যবিয়ের শিকার হতে হয়েছে। দুর্গা মনে করেন, বাল্যবিয়ে বন্ধের একমাত্র পথ শিক্ষা। তিনি বলেন, দলিত পরিবারগুলোর সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকার কারণ আর্থিক নয়, মূল কারণ সচেতনতার অভাব আর অশিক্ষা।

সে কারণেই দলিত প্রবীণ রঙ্গু ঋষির উদ্যোগে তৈরি শিশু বিকাশ কেন্দ্রে পাঠদান শুরু করেন দুর্গা। শিশু বিকাশ কেন্দ্রের সঙ্গে কাজ করছে বারসিক নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি স্কুলের উপকরণ সহায়তা, অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে বারসিক।

স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, একসময় নীচু বর্ণের মানুষকে সব থেকে পেছনে রাখা হতো। তাদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হতো না। দিন বদলেছে, এখন ওই সমাজের কিছু ছেলেমেয়ে কষ্ট করে পড়াশোনা করে নিজেদের সমাজে শিক্ষার প্রসারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার চেষ্টা করছে। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা উচিত।

সূত্র: সমকাল, প্রতিবেদক খলিলুর রহমান শেখ


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence