ফেনীর ভয়াবহ বন্যার ছয় মাস পরও পুনর্বাসন চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল
- ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:১৭ PM , আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩৫ PM

ফেনীতে গত বছরের আগস্টে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যার ছয় মাস পার হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও পুনর্বাসন কার্যক্রমের গতি আশানুরূপ নয় বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ফেনীতে ৮ হাজার ৬৫৯টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭১৮টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে, বাকিগুলো আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হলেও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ঘরগুলোর পুনর্নির্মাণ এখনো শেষ হয়নি। সরকারি উদ্যোগে প্রথম পর্যায়ে ১১০টি নতুন ঘর নির্মাণের কাজ চলছে, তবে সেটিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিচ্ছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১১০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে, যেখানে ফেনী সদর, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, সোনাগাজী ও দাগনভূঞার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী মিলে ১৫০টির বেশি ঘর মেরামত করেছে এবং নৌবাহিনী ৮৫টি নতুন ঘর নির্মাণ করেছে।
ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় সরকারিভাবে ৪০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা ২০০টি পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, ইউএনডিপি, রেড ক্রিসেন্ট, ব্র্যাক, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সহায়তা দিচ্ছে। ইউএনডিপি ইতোমধ্যে দুই ধাপে ৫ হাজার পরিবারকে ঘর মেরামতের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়েছে। রেড ক্রিসেন্ট ৫ হাজার ৫০০ পরিবারকে নগদ সহায়তা প্রদান করেছে।
এদিকে, ফেনীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জানিয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে ১২০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে এবং ৬৯টি ব্রিজ-কালভার্ট পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডও জানিয়েছে, ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও সোনাগাজীতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো মেরামত করা হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জেলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত সহযোগিতা সমন্বয় করে পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্নভাবে সহায়তা দেওয়া হলেও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য প্রথম পর্যায়ে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১১০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে, যা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। এছাড়া, বাকিদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং ধাপে ধাপে বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করা হবে।
আরও পড়ুন: ‘ফজরের আগেই ঘুম ভাঙানো হয়, খুব কষ্টে আছি আমি’
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন এনজিও তালিকা চেয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে রেড ক্রিসেন্ট ১৯০টি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলোর মেরামত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বর্তমানে পাইলটিং প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকারি উদ্যোগেে পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি, এনজিও সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি, কারণ এতে জেলার রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত থাকে। চলমান উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১১০টি ঘর নির্মাণের কাজ চলছে, যা বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে সমন্বয় করে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, এই ১১০টি ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর বেসরকারিভাবে নির্মিত ঘরগুলোর যাচাই-বাছাই করা হবে। পরবর্তীতে যেসব ঘর নির্মাণ বাকি থাকবে সেগুলোর জন্য নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।