শ্রেণিকক্ষ নির্মাণসামগ্রী ও শ্রমিকের দখলে, মাদ্রাসা ছাড়ছে শিক্ষার্থীরা

কদশ্রী দাখিল মাদ্রাসা
কদশ্রী দাখিল মাদ্রাসা  © সংগৃহীত

নেত্রকোনার মদন উপজেলার কদশ্রী দাখিল মাদ্রাসার ভবন নির্মাণকাজ সাত বছরেও শেষ হয়নি। বছরের পর বছর ধরে মাদ্রাসার পুরো মাঠসহ শ্রেণিকক্ষ দখলে নিয়ে নির্মাণসামগ্রী রেখেছে ঠিকাদারের লোকজন। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এবং মাদ্রাসা ত্যাগ করছে শিক্ষার্থীরা।

এ নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বারবার প্রতিবাদ জানালে উল্টো ঠিকাদারের লোকজন হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে দায়সারা নির্মাণকাজ করার অভিযোগও উঠেছে।

নেত্রকোনা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল মদন উপজেলার প্রত্যন্ত কদমশ্রী গ্রামে ১৯৪২ সালে কদশ্রী দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। আবাসন ও শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় ১৯৯৫ সালের দিকে এক তলা একটি ভবন নির্মাণ করে সরকার। দিন দিন শিক্ষার্থী বাড়তে থাকে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষের সংকট থেকে যায়। বর্তমানে মাদ্রাসাটিতে চার শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।

শিক্ষা প্রকৌশলের অর্থায়নে ২০১৮ সালে কদমশ্রী দাখিল মাদ্রাসায় একটি চার তলা ভবন নির্মাণ করার অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। কাজটি বাস্তবায়ন করছে নেত্রকোনার মামুন সৈকত নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু ছয় বছরেও কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদার।

২০১৮ সাল থেকে ঠিকাদারের লোকজন মাদ্রাসার কয়েকটি শ্রেণিক্ষক দখল করে রেখেছেন। এ নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদ করলেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। উল্টো ঠিকাদারের লোকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট, পাথর, বালু, সিমেন্ট ও মরিচা ধরা রড ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মাদ্রাসায় গেলে দেখা যায়, পুরো মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ইট,পাথর, বালু ও রড ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। দশম শ্রেণির কক্ষে স্তূপ করে আছে সিমেন্টের বস্তা। এক পাশে সিমেন্ট ও অন্য পাশে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। নবম শ্রেণির কক্ষে ঠিকাদারের লোকজন বিছানা পেতে বসবাস করছে। সেখানে কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই।

জানতে চাইলে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফা আক্তার, রিয়া মনি, ফারজানা আক্তার বলে, আমাদের শ্রেণিকক্ষের ভেতরে সিমেন্ট রাখা হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই সিমেন্ট দিয়ে শ্রেণিকক্ষ দখল করে রাখা হয়েছে। আমাদের ৩০ জন শিক্ষার্থী ঠিকমতো বসার সুযোগ না পাওয়ায় এখন আর কেউ মাদ্রাসায় আসতে চায় না। আজ শুধু আমরা চারজন আসছি।

তারা আরও বলে, যখন ক্লাস চলে, শ্রমিকরা হুট করে চলে আসে সিমেন্ট নিতে। তখন আমাদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। তাদের কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছি না। আমরা এর প্রতিকার চাই।

মাদ্রাসার সুপার এ টি এম মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৮ সালে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও কাজ শুরু করেছে ২০১৯ সালে। শেষ করার কথা ২০২৩ সালে কিন্তু এখনো কাজ শেষ হয়নি। শ্রেণিকক্ষে মালপত্র রাখতে বারবার নিষেধ করলেও ঠিকাদারের লোকজন মানছে না। কয়েকটি বছর ধরে মাদ্রাসার পাঠদানের খুবই সমস্যা হচ্ছে।

সব অভিযোগ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সুজাত হুসাইন বলেন, কাজ শেষ করার জন্য সময় বাড়ানো হয়েছে। কোনো রকম নিম্নমানের সামগ্রী আমরা ব্যবহার করছি না। তবে শ্রেণিকক্ষ দখলের বিষয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে মাদ্রাসা থেকে সটকে পড়েন তিনি।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহি আলম বলেন, কদশ্রী মাদ্রাসার কাজ নিয়ে একটু অসুবিধায় আছি। ঠিকাদারকে বারবার বলার পরও কাজ শেষ করতে পারছি না। বিষয়টি আমার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অহনা জিন্নাত বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence