সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ২ হাজার শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা

অডিটোরিয়ামে সংবর্ধনা পাওয়া শিক্ষার্থীরা
অডিটোরিয়ামে সংবর্ধনা পাওয়া শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেল ভর্তির সুযোগ পাওয়া দুই হাজার শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আরটিডিএস এর  উদ্যোগে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞানী এবং আসপেক্ট সিরিজের প্রধান উপদেষ্টা মো. হোসেন আলী।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি ছাড়াও এপ্রোন, মেডেল, টি-শার্ট, ঘড়ি, স্টেথোস্কোপ এবং বই উপহার দেওয়া হয়। 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ডা. রিজভী তৌহিদ, ডা. মাইনুল ইসলাম সফল,  ডা. নাঈমুল ইসলাম রাহাত, ডা. শেখ সাদী মোহাম্মদ, ডা. অন্তর সাহা, মঈনুল হাছান, জোবায়ের আল জাদিদ, ডা. আহমেদ সাঈদ শুভ, তাশদিদ আহমেদ তুরাব, ডা. মারিফুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে  মোঃ হোসেন আলী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে বলেন, মানুষ কখনোই সহজ পথে সাফল্যে পৌঁছায় না। জীবনসংগ্রামে অনেকে হার মানে, আবার কেউ কেউ সমস্ত প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যায়। এমনই দুজন ব্যতিক্রমী মানুষের গল্প বলছি, যারা কেবল নিজেদের জন্যই নয়, মানবতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।  

অবিশ্বাস্য মেধাবী আফিয়া সিদ্দিকী এমআইটি (MIT) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর নিউরোসায়েন্স বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ব্রেন্ডিস ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জন নয়। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অবহেলিত, নির্যাতিত নারী ও শিশুদের জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবেন।  

কিন্তু তার স্বপ্নপূরণের আগেই ২০০৩ সালে তাকে গুম করা হয়। পরবর্তীতে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনে তাকে আল-কায়েদার সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়। অবিচারের শিকার হয়ে তিনি ৮৬ বছর কারাগারে বন্দী জীবন কাটান।  

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কঙ্গোর ডেনিস মুকওয়েগ একসময় ধর্মযাজক হতে চেয়েছিলেন। তার বাবা চেয়েছিলেন তিনিও ধর্মযাজক হোন, কিন্তু তিনি উপলব্ধি করেন, মানবতার সবচেয়ে বড় ধর্ম হলো মানুষের পাশে দাঁড়ানো।  

সেই সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত কঙ্গোতে ৯০ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছিল, নারীরা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, একজন চিকিৎসক হবেন। কিন্তু পড়াশোনা শুরুর পর তিনি চরম অর্থকষ্টে পড়েন। জীবন বাঁচাতে তিনি ফ্রান্সে পাড়ি জমান। এমনও দিন গেছে, যখন তিনি একবেলার টিউশনি করে সেই টাকা দিয়ে একবেলা খেয়েছেন।  

অবশেষে তিনি চিকিৎসক হয়ে ফিরলেন, এবং তার হাতে যেন জাদু ছিল—একটা রোগীকে দেখেই বলে দিতে পারতেন, তার কী চিকিৎসা দরকার।  

কিন্তু তখন কঙ্গোতে শুরু হলো ভয়াবহ যুদ্ধ। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হলো যে, তাকে গৃহবন্দী করা হয়। কিন্তু তিনি মুক্তি পেয়ে নারীদের পাশে দাঁড়ালেন। তার অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বলা হয় দি ম্যান হু রিপেয়ারস উইমেন—তিনি শুধু নারীদের চিকিৎসা দেননি, তাদের নতুন জীবন দিয়েছেন।  

আমাদের জীবনেও কখনো কখনো পড়াশোনার চাপ, পরীক্ষার স্ট্রেস, কিংবা মানসিক কষ্ট এসে ভর করবে। মনে হতে পারে, সব ছেড়ে দাও! কিন্তু মনে রেখো, তোমাদের কষ্ট আফিয়া সিদ্দিকী ও ডেনিস মুকওয়েগের চেয়েও বড় নয়।

সবশেষে প্রাণিসম্পদ বিজ্ঞানী মোঃ হোসেন আলী বলেন, একজন ডাক্তার তখনই প্রকৃত ডাক্তার হয়, যখন সে মানবিক গুণাবলি অর্জন করে। শুধুমাত্র পেশাদার ডাক্তার হলে হবে না, তোমাকে একজন মানবিক ডাক্তার হতে হবে।  

মানুষ তখনই পথ হারায়, যখন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই তোমরা পরিবারের সঙ্গে কানেক্ট থাকো, ভালো থেকো, এবং সবসময় মানবতার পাশে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করো।

ডাক্তার তো অনেক আছে, কিন্তু মানবিক মানুষের অভাব আমাদের দেশে।


সর্বশেষ সংবাদ