ইনানী থেকে এভারেস্টের চূড়া—দুর্ধর্ষ অভিজ্ঞতা জানালেন বিশ্ব রেকর্ডধারী শাকিল

ইকরামুল হাসান শাকিল
ইকরামুল হাসান শাকিল  © সংগৃহীত

অক্সিজেনশূন্য উচ্চতায় কৃত্রিম অক্সিজেন মাস্কবদ্ধ মুখে প্রতিবারই ইকরামুল হাসান শাকিল মনে হয়েছে, আর পেরে উঠবেন না। কিন্তু যার হৃদয়ে বাজতে থাকা বাংলাদেশের নাম, সেই অভিযানের অঙ্গীকার তাকে এগিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) ফেসবুকে নিজের আইডিতে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। পাঠকদের জন্য তার পোস্টটি তুলে ধরা হলো।

পোস্টে শাকিল লেখেন, ‘১৯ মে ২০২৫। সকাল সাড়ে ৬টা। আমি দাঁড়িয়ে আছি পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দুতে। মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায়। মাথার ওপরে বিশুদ্ধ নীল আকাশ থাকার কথা ছিল কিন্তু প্রকৃতি সেটা চায়নি। চেয়েছিল চরম পরীক্ষা। পায়ের নিচে ছিল অসীম শূন্যতা। ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার ওপরে দাঁড়িয়ে আমি শুধু একজন পর্বতারোহী নই, আমি তখন হাজারো আবেগ, ত্যাগ, সংগ্রাম আর স্বপ্নের প্রতিনিধি।’

বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘এ পথ সহজ ছিল না। হিমালয়ের অতল গভীর বরফের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে আমাদের জীবনবিন্দু। প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল মৃত্যু আর জীবনের মাঝখানে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য। যমুনা নদীর উত্তাল খরস্রোতা ঢেউ, অনিশ্চয়তার দীর্ঘ পথ, খুম্বু আইসফল, লোৎসে ফেস, সাউথ কল, হিলারি স্টেপ একেকটা জায়গা যেন একেকটা মানসিক যুদ্ধক্ষেত্র ও মৃত্যুর চোখ রাঙানি। অক্সিজেনশূন্য উচ্চতায় কৃত্রিম অক্সিজেন মাস্কবদ্ধ মুখে প্রতিবারই মনে হয়েছে, “আর পেরে উঠব না”। কিন্তু হৃদয়ে বাজতে থাকা বাংলাদেশের নাম আর ‘সি টু সামিট’ অভিযানের অঙ্গীকার আমাকে এগিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।’

আরও পড়ুন : নির্বাচনী চাপের মুখে ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি

‘এভারেস্ট জয়ের এই অভিযান ছিল “সি টু সামিট” নামের একটি বৃহৎ মিশনের অংশ; যার মূল লক্ষ্য ছিল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পর্বতশিখর পর্যন্ত এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে, ‘পৃথিবী আমাদের, আমাদেরই দায়িত্ব প্লাস্টিক দূষণ ও কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে টিকিয়ে রাখা আমাদের ভবিষ্যৎ।”’

নিজ দেশের সমুদ্রসৈকতের দূষণ নিয়ে শঅকিল বলেন, ‘আমার এই যাত্রা শুরু হয়েছিল বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চল কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে, যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্যে দম বন্ধ হয়ে আসছে সাগর, সমতল, পাহাড়ের জীবন। আমি সেই দূষণ আর পরিবর্তনের বার্তা নিয়েই পর্বতমুখী হয়েছিলাম, যেন বিশ্বের সর্বোচ্চ শিখরে দাঁড়িয়ে বলতে পারি, “আমরা যদি পাহাড় জয় করতে পারি, তবে নিজের ভেতরের অসচেতনতাকেও জয় করতে পারি।’

‘পর্বতারোহণ আমার কাছে কেবলই অ্যাডভেঞ্চার নয়। এটি দায়িত্ব, প্রতিবাদ এবং প্রজন্মের প্রতি এক প্রতিজ্ঞা। সমুদ্র থেকে শুরু করে বরফচ্ছন্ন শিখরে উঠে আমি বলতে চেয়েছি, পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সময় এখনই। আজ যদি আমরা সচেতন না হই, কাল হয়তো কোনো এভারেস্টই থাকবে না, থাকবে না আমাদের হাঁটার মতো পথ, বাঁচার মতো বাতাস।’

দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ নিয়ে ইকরামুল শাকিল বলেন, ‘এভারেস্টের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আমি কেঁদেছি-কৃতজ্ঞতায়, আনন্দে, আর দায়িত্ববোধে। এই আরোহণ শুধু আমার একার নয়। এটি আমার দেশের, আমার মানুষদের, আর সেই সকল তরুণের যারা আজও স্বপ্ন দেখে নিজের সীমা ভেঙে কিছু করে দেখানোর। আমার যাত্রা থেমে যায়নি। এটি কেবল শুরু। কারণ “সি টু সামিট” কেবল একটি অভিযান নয়, এটি একটি বার্তা, একটি বিপ্লব।’

আরও পড়ুন : এভারেস্টের চূড়ায় গাজীপুরের শাকিল, আবেগাপ্লুত কিষানি মা ও এলাকাবাসী

শাকিল আরও বলেন, ‘তাশি গ্যালজেন শেরপা, আমার শুধু গাইড না। একজন ভাই ও বন্ধু।তার কারণেই এই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছি। বছর দুয়েক আগে দুজনে পরিকল্পনা করেছিলাম একসাথে দুইটা রেকর্ডময় অভিযান করব। সেটাই করেছি, আমি “সি টু সামিট” আর গ্যালজেন ২০ দিনে চারবার এভারেস্ট সামিট। আমারটা সফল ভাবে শেষ এবং তার তিনবার শেষ হয়েছে। এখন সে আছে ৪র্থ সামিটের পথে। আশা করি ২৩ তারিখ সকালে নেপালের পতাকা ওড়াবে। ওর জন্য শুভকামনা।’

‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সেই সকল মানুষদের, যারা এই অভিযানের পেছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আমাকে এগিয়ে নিতে। একবারের জন্য হাল ছেড়ে দেয়নি, আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলেন এবং সাহস জুগিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রাণ, ইউএনডিপি, মাকালু ই ট্রেডার্স, সিস্টেমা টুথব্রাশ, মি. নুডলস, অদ্রি, 8K Expedition, সাকেব নাজিম (শুভ্র) ও আরো অনেকের ভালোবাসাকে।’

ইকরামুল শাকিল লেখেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ রোধ করুন, কার্বন নির্গমন হ্রাস করুন।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence