আওয়ামী লীগ নেতাকে সংবর্ধনা, অতিথি ডিসি-এসপি
- ফেনী প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৭ PM , আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ AM
কাতারস্থ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাখাওয়াত খানকে ফেনীতে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাতে শহরের একটি রেস্টুরেন্টে আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নান, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএসআর মাসুদ রানা এবং ফেনী জেলা ব্যাংকার্স ফোরামের সভাপতি সামছুল করিম মজুমদার। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পর জেলাজুড়ে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের এম সাখাওয়াত খান ২০২৩ সালে কাতার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। তার আগে থেকেই তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে এম সাখাওয়াত বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) নির্বাচিত হওয়ায় তাকে এ সংবর্ধনা দিয়েছেন আলোকিত ফেনী ফাউন্ডেশন। এ অনুষ্ঠানের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী রাজনীতিতে সংবর্ধিত এম সাখাওয়াত খানেের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণসহ নানা চিত্র উঠে আসে। এনিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
ফেসবুকে বেলাল হোসাইন নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের অর্থদাতা এম সাখাওয়াত খান কাতারস্থ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। কাতারে তার বাসায় ফেনী পৌর মেয়রসহ কয়েকজন কমিশনার, যুবলীগের দায়িত্বশীল নেতা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের অবস্থান রয়েছে। আর আমরা তাকে সংবর্ধনা দিচ্ছি। কি জবাব দিবেন ৪ আগস্টের বীর শহীদদের? অর্থের কি ক্ষমতা।’
জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রাসেল পাটোয়ারী এক পোস্টে মন্তব্য করেন, ‘টাকার কাছে সবাই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কিছু টাকার বিনিময়ে আওয়ামী পরিবারের লোককে সংবর্ধনা দিচ্ছে। এসবের ধিক্কার জানাই।’
আল ইমরান নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘টাকার বিনিময়ে যদি আওয়ামী দোসররা সংবর্ধনা নেন আর ওই অনুষ্ঠানে আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা যায় তাহলে আমরা কোথায় যাবো? আওয়ামী দোসরা প্রকাশ্যে খুনখারাপি করেও তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নেই।’
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক ওমর ফারুক বলেন, আমাদের ভাইয়ের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। অথচ এর মধ্যেই একজন আওয়ামী দোসরকে সিআইপি নির্বাচিত হওয়ায় সংবর্ধনা দিল। যেখানে ডিসি, এসপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের সঙ্গে সরাসরি বেঈমানি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল জুবায়ের বলেন, এমন আয়োজন নিয়ে আমরা হতাশ। বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো না। যারা আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে তারাও আওয়ামী লীগের দোসর। আওয়ামী লীগ নেতাকে সংবর্ধনা দেওয়া মানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা। শুধু ফেনী নয়, এ দেশে যারাই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে অতিথি থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ‘আমি অনুষ্ঠানের ভেন্যুতে যাওয়ার পরপরই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত হন। ওই সময়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া সংবর্ধিত এ ব্যক্তি ২০১৭ সালে চেক জালিয়াতির মামলায়ও কারাগারে ছিলেন। সেখানে তিনি আওয়ামী নেতার চেয়েও চেক জালিয়াতির বিষয়টি নিয়ে আমি লজ্জিত। এছাড়া এ অনুষ্ঠানে আমি ছাড়াও সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির ও জেলা ছাত্রদল সভাপতি সালাউদ্দিন মামুনও উপস্থিত ছিলেন।’
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, এই প্রোগ্রামটি যারা আয়োজন করেছে, তারা বিষয়টি ভালো বলতে পারবে। আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল, তাই আমরা অতিথি হিসেবে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, ফেনীর অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমরা জানতাম যে তিনি (এম সাখাওয়াত খান) একটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, তবে উনার অন্যান্য পরিচয় সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। এ বিষয়ে কেউ আমাদের কিছু বলেনি। আমরা সেখানে গিয়েছি শুধুমাত্র প্রবাসীদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করার জন্য।