এখন নির্বাচন হলে আ.লীগ কত ভোট পাবে, জানিয়েছে বিআইজিডি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১২ AM , আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ AM
বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় আছে। ৫ আগস্টের পর দলটিকে প্রকাশ্যে তেমন বড় কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। জেলা ও উপজেলাভিত্তিক ছোট ও বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি মিছিল দেখা গেছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কোনো নেতকর্মীকে সরব দেখা যায়নি। তবে প্রবাসে থাকা নেতারা ফেসবুক ও ইউটিউবে সরব বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নানা বিষয়ে সংস্কারকাজে হাত দিয়েছে। প্রয়োজনী আইন সংস্কার করে এবং পুরনো আইনে আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের অন্যায়-অবিচারের বিচার করায় ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচন নিয়ে উঠে পড়ে লাগলেও, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। তারা চাইছে আগে বাজার ঠিক কার হোক।
এমন পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে দেশে নির্বাচন হলে কোন দল কত ভোট পাবে, এমন তথ্য উঠে এসেছে জরিপে। তাতে দেখা গেছে, ৯ শতাংশ মানুষ এখনো ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
এ ছাড়া বাকি ১৬ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে, ১১ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেবেন। তবে ৩৮ শতাংশ মানুষ এখনো সিদ্ধান্ত নেননি কাকে ভোট দেবেন। আর ২ শতাংশ মানুষ শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলে তাদের ভোট দিতে চান। আর মাত্র ১ শতাংশ মানুষ বলছেন, তারা জাতীয় পার্টিকে ভোট দেবেন।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভের’ দ্বিতীয় ধাপের জরিপের ফলাফলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই মতামত নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ১৫ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে (পিআইবি) এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন: কাল বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও জেলা-উপজেলায় কর্মসূচির আহ্বান আওয়ামী লীগের
বিআইজিডির আয়োজনে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ : মানুষ কী ভাবছে’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা সহযোগী শেখ আরমান তামিম অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষের প্রত্যাশ্যা অনেক বেড়েছিল। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী অনেক কিছুই অপূর্ণ রয়েছে। ভবিষ্যৎ নিয়েও জনমনে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
তবু উত্তরদাতাদের ৫৬ শতাংশ বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে ৩৪ শতাংশ মনে করেন, দেশ ভুল পথে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের আগস্টে করা পালস সার্ভের প্রথম ধাপে পাওয়া ফলাফলের তুলনায় যা কমেছে। আগের সমীক্ষায় উত্তরদাতাদের ৭১ শতাংশ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তখন দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন ১২ শতাংশ মানুষ।
এই জরিপে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৪ হাজার ১৫৮ জনের থেকে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে মতামত নেওয়া হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। দেশে এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ নিষ্ক্রিয়। শেখ হাসিনা ভারতে বসে বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং সেসবের অডিও ফাঁস হচ্ছে বলে বলা হয়েছে। সম্প্রতি লন্ডনে একটি সভায়ও তাকে অডিও বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগ কি রাজনীতিতে ফিরবে? যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার কাজের মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনাসহ দলের নেতাকর্মীদের বিচার করা। অনেকে দল নিষিদ্ধের কথা বলছে। আবার বড় কয়েকটি দল চায় আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরে আসুক তবে ভুল শুধরে।
আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগে যারা অপরাধী ছিল, তাদের বিচার করা দরকার।
এর আগে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আওয়ামী লীগের অপরাধী যারা, তাদের বিচার করা দরকার। আওয়ামী লীগ যদি পুনর্গঠিত না হয়, তাহলে তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন সম্ভব বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে অনেকেই মনে করছেন যে শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগ বিরতি ভেঙে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ বরাবরই রাজনীতিতে আছে। তার নতুন করে ফিরে আসার তো কিছু নাই।
তিনি আরও বলেছেন, দেশ এখন দুর্বৃত্তদের হাতে চলে গেছে। দেশকে, দেশের মানুষকে, দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা আওয়ামী লীগের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ আওয়ামী লীগ এই দেশের সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত।