বাবার সঙ্গে বিরোধে মুনতাহাকে হত্যা করেন গৃহশিক্ষিকা

মুনতাহা আক্তার
মুনতাহা আক্তার  © সংগৃহীত

নিখোঁজের কয়েক দিন পর লাশ হয়ে ফিরল পাঁচ বছর বয়সী শিশু মুনতাহা আক্তার। তাকে হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য খালের ভেতরে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। রোববার (১০ নভেম্বর) ভোরে সেখান থেকে মরদেহ তুলে মুনতাহার চাচার পুকুরে ফেলার সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে আটক করেন মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম ওরফে মার্জিয়ার মা আলিফজান বেগমকে। এ সময় গলায় রশি প্যাঁচানো অবস্থায় মুনতাহার মরদেহ উদ্ধার করেন তারা।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত এই দুজনসহ ছয়জনকে আটক করেছে স্থানীয় পুলিশ।

নিহত মুনতাহা সিলেটের কানাইঘাট সদরের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। নিষ্পাপ শিশুটির হত্যাকাণ্ডে শোকে স্তব্ধ কানাইঘাট। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো সিলেটজুড়ে।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বিকেল ৪টায় শিশুটির মরদেহ বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তার জানাজায় হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ অংশ নেয়।

গত ৩ নভেম্বর আপেল খেতে খেতে প্রতিবেশী গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়ার ঘরে প্রবেশ করে মুনতাহা। যে ঘরে বই-খাতা নিয়ে পড়তে বসত মুনতাহা, সেই চেনা ঘরেই তাকে গলা চেপে হত্যা করে মার্জিয়া। পরে শিশুর নিথর দেহ মার্জিয়া ও তার মা মিলে বাড়ির পেছনের ডোবায় পুঁতে রাখে। মার্জিয়া নিজেই পুলিশের কাছে এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা পুলিশের কানাইঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অলক কান্তি শর্মা।

আরও পড়ুন: মুনতাহার মরদেহ পুকুরে ফেলার সময় প্রতিবেশী মা-মেয়ে আটক

তিনি বলেন, এ ঘটনায় আটক মার্জিয়া ও আলিফজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিকভাবে তারা পুলিশকে জানিয়েছে, মুনতাহার বাবার সঙ্গে তাদের বিরোধ রয়েছে। তবে কী নিয়ে বিরোধ, তা জানা যায়নি।

পুলিশ জানায়, শিশুটির মরদেহ ডোবায় কাদার মধ্যে পুঁতে রাখা ছিল। মার্জিয়া আটক হওয়ার পর তার মা আলিফজান লাশটি ডোবা থেকে তুলে গতকাল ভোরে শিশুটির চাচার বাড়ির পাশে একটি পুকুরে ফেলে আসতে যায়। পথে স্থানীয়রা হাতেনাতে তাকে ধরে ফেলেন।

পুলিশ আরও জানায়, প্রায় এক সপ্তাহ মরদেহ কাদামাটিতে চাপা থাকায় পচে মাথার খুলি বেরিয়ে গেছে। এ ঘটনায় মার্জিয়া ও তার মা আলিফজান ছাড়াও মার্জিয়ার নানি কুতুবজান, প্রতিবেশী নিজাম উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন ও নাজমা বেগমকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ৩ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার দিনই তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ ঘরের পাশের একটি খালে কাদামাটিতে চাপা দিয়ে রাখা হয়। আজ (রোববার) ভোরে আলিফজান বেগম মরদেহ সরানোর চেষ্টাকালে স্থানীয়রা দেখে ফেলেন। এ সময় স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় মার্জিয়া, তার মা ও নানিকে আটক করা হয়েছে। আলিফজান ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করত। কী কারণে মুনতাহাকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

এর আগে ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরে শিশু মুনতাহা। পরে আশপাশের বাড়িতে শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেল হলে বাড়ি না ফিরলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তারপর তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের পর থেকে পরিবার দাবি করে আসছিল, পরিকল্পিতভাবে মুনতাহাকে অপহরণ করা হয়েছে।

নিখোঁজের ঘটনায় কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছিল পরিবার। শিশুটিকে খুঁজে পেতে পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল তারা। তবে মুনতাহাকে আর জীবিত ফিরে পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence