ঢাকায় যানজটে দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে

ঢাকায় যানজটে দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে
ঢাকায় যানজটে দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে

রাজধানীতে মাত্রাতিরিক্ত যানজটের কারণে দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট (ডব্লিউবিবি)।

সংগঠনটি বলছে, অপরিকল্পিত নগর পরিবহন ব্যবস্থার কারণে রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। এখনই যানজট হ্রাসে উদ্যোগ গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করলে তিন বছরের মধ্যে ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম দূর কর সম্ভব বলে মনে করে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট আয়োজিত ‘যানজটের অভিশাপ থেকে পরিত্রাণে করণীয়’-শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে ঢাকায় গাড়ির গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে। ঢাকায় যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে দৈনিক প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা। অর্থমূল্যে যা দৈনিক প্রায় ১৩৯ কোটি এবং বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার অধিক। যানজটের এই সমস্যার জন্য শৃঙ্খলা না মেনে গাড়ি চালানো, রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কে মেগা প্রকল্পগুলোর কালক্ষেপণ, ব্যক্তিগত গাড়ি নির্ভর পরিকল্পনা, দুর্বল ট্রাফিক সিগন্যাল ও মনিটরিং ব্যবস্থা, যানবাহন নিবন্ধনে অব্যবস্থাপনা, সার্বিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানভিত্তিক ও আধুনিক পদ্ধতির অভাবসহ বেশ কিছু কারণ দায়ী।

আরেকটি প্রবন্ধে ট্রাফিক সিগনাল সিস্টেম গবেষক ও ট্রাফিকসের সিইও আশরাফুল আলম রতন বলেন, হাত-লাঠি নির্ভর সিগনাল সিস্টেম, সিগনালে যানবাহনের পারাপারের মধ্যে বিশৃঙ্খলা, যানজট সৃষ্টি হতে পারে এমন স্থানে গাড়ি পার্কিং করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, আইনের প্রতি সম্মান ও বাধ্য না থাকা, চালকের নিয়মিত প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক না করার কারণে ঢাকা শহরের ট্রাফিক সিস্টেম অকার্যকর হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্বনির্বাচনযোগ্য সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা Customizable Integrated Traffic Management System (CITMS) প্রস্তাব করছি। এর মাধ্যমে সারা বছর ২৪ ঘণ্টা সিগন্যাল অপারেশন চলমান রাখা, গাড়ির গড় গতি ২৫-৩০ কিলোমিটারে ফিরিয়ে আনা, আইন ভঙ্গকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, পথচারীদের যাতায়াতে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, আন্তবিভাগীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন, দূষণকারী বাহন চিহ্নিত করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন সম্ভব হবে।’

ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থারও সংস্কার দরকার। যানজটের অভিশাপ থেকে মুক্তি দরকার। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল কোনো একটি টকশোতে বলেছিলেন, তাঁকে দায়িত্ব দিলে পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকার যানজট দূর করে দেবেন। এখনতো ওনারাই আমাদের এই দায়িত্বগুলোতে আছেন। আসলে ঢাকার যানজট দূর করতে তিন বছরই যথেষ্ট। এ জন্য প্রায়োরিটি ঠিক করে কাজ করতে হবে।’

যোগাযোগ ব্যবস্থা জনগণের ওপর চাপিয়ে না দিয়ে জনগণের মতামত নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘জাপান-আমেরিকা করার প্রয়োজন নেই। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করি। তাহলে তিন বছরের মধ্যে ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম দূর করা সম্ভব। সে জন্য ঢাকার ওপর কন্ট্রোল আনতে হবে। ঢাকায় ৩ কোটি মানুষের পরিকল্পনা করে কয়েক বছর পরে ৬ কোটি মানুষ নিয়ে এলে সেটা হবে না। কিছু গণপরিবহন, কমিউটার ট্রেন নামাতে হবে।’

এ ছাড়াও গণপরিবহনের সিটি সার্ভিস এবং অন্যান্য সার্ভিসের জন্য পৃথক নীতিমালা, সহায়ক আইন প্রণয়ন; ট্রাফিকদের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘস্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণ; দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প খরচে ট্রাফিক সিস্টেমের সমস্যার সমাধান; সড়ক পরিবহন আইনটি পূর্ণাঙ্গকরণ ও পরিবহন পরিকল্পনায় নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করেন অন্যান্য বক্তারা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমাধানে ফিটনেসহীন বাস অপসারণ, গণপরিবহনের মান উন্নয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য পৃথক বাস প্রচলন, রাস্তায় একদিন জোড় এবং একদিন বেজোড় সংখ্যার ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ, ডিটিসিএ-এর মাধ্যমে সমন্বিত মনিটরিং কমিটি/টাস্কফোর্স কমিটি গঠন এবং নিয়মিত মনিটরিং করা, রাস্তায় অবৈধ পার্কিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, নগর পরিবহনের জন্য পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, সড়কে যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধ করা, সায়েদাবাদ, গাবতলী এবং মহাখালী আন্ত টার্মিনাল সংযোগ তৈরি, নগরীর ট্রাফিক রুট পুনঃ বিন্যাস, সড়ক ব্যবস্থাপনায় অধিক গুরুত্বারোপ, প্রধান সড়ক থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশা প্রত্যাহার, যানজট নিরসনে স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, বিআরটিসিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করে একক কোম্পানির মাধ্যমে নগরীর বাস পরিষেবা চালু করাসহ ১৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার আমিনুল ইসলাম সুজন, সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের নির্বাহী সদস্য মারুফ হোসেন ও প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ।


সর্বশেষ সংবাদ