‘এভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ঠিক হয়নি’

ট্রলারে করে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে ইনানী সৈকতে নামিয়ে দেওয়া হয় এই রোহিঙ্গা তরুণদের
ট্রলারে করে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে ইনানী সৈকতে নামিয়ে দেওয়া হয় এই রোহিঙ্গা তরুণদের  © সংগৃহীত

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির থেকে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে দালালরা মাছ ধরার একটি ফিশিং ট্রলারে ওঠায় শতাধিক রোহিঙ্গাকে। টানা ১০ দিন রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলারটি গভীর সাগরের এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করে। সোমবার (১৪ অক্টোবর) ভোরে রোহিঙ্গাদের নামিয়ে দেওয়া হয় উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইনানী সৈকতে।

এরপর রোহিঙ্গারা এদিক-সেদিক ছুটতে থাকেন। সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইনানীর বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে ২৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেন। অন্য রোহিঙ্গারা পাহাড়ে আত্মগোপন করেন। এ সময় গা ঢাকা দেয় দালালরা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রেজাউল করিম বলেন, আটক রোহিঙ্গাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দালালসহ পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ধরতে অভিযান চলছে। আটক ২৬ রোহিঙ্গা কোস্টগার্ডের হেফাজতে রয়েছেন।

পুলিশ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর ৪টার দিকে রোহিঙ্গাবোঝাই একটি ট্রলার ইনানী সৈকতে এসে থামে। এ সময় ১১০ থেকে ১২০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ট্রলার থেকে নেমে বালুচরে জড়ো হন। স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পান সবাই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। দালালরা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে কয়েক দিন গভীর সাগরে ঘুরিয়ে তাদের এই সৈকতে নামিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে রোহিঙ্গারা পালাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও কোস্টগার্ড ঘটনাস্থলে পৌঁছে ২৬ রোহিঙ্গাকে আটক করলেও ৮০ থেকে ৯০ জন রোহিঙ্গা লোকালয়ে ঢুকে পড়েন।

আরও পড়ুন: নারীকে টেনে তুলতে গেলে গুলি ঢুকে যায় রাকিবের গলায়

পুলিশের হাতে আটক উখিয়ার ময়নারঘোনা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৭) বাসিন্দা রোহিঙ্গা তরুণী খুরশিদা বেগম (২৪) এক দালালকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ট্রলারে চেপেছিলেন মালয়েশিয়া যাবেন বলে।

তিনি বলেন, ‘দালাল আমাকে বলেছিল, মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরি হবে। তাই তার কথা শুনে ট্রলারে উঠেছিলাম। ট্রলারটি গভীর সাগরে ১০ দিন ছিল। আজ ভোরে আমাদের ইনানী সৈকতে নামিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মনে হলো এভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ঠিক হয়নি।’

আরেক রোহিঙ্গা বলেন, ‘ট্রলারের যাত্রীরা সবাই উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা অনিশ্চিত দেখে তারা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেতে ট্রলারে ওঠেন। টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গাদের বোঝাই করে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ট্রলারটি যাত্রা শুরু করে। সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণের বঙ্গোপসাগরের জলসীমানা অতিক্রম করার সময় মিয়ানমার নৌবাহিনী সামনে পড়ে। তখন ট্রলার ঘুরিয়ে গভীর সাগরের দিকে নেওয়া হয়। টানা ১০ দিন সাগরে ছিলাম। আজ ভোরে দালালরা সবাইকে ইনানী সৈকতে নামিয়ে দেয়। এরপর দালালরাও লাপাত্তা হয়ে যায়।’

পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর শান্ত থাকে। তখন মানবপাচারকারী ব্যক্তিরা তৎপর হয়। মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা রোহিঙ্গাদের ট্রলারে তুলে দেয়। মেয়েদের সেখানে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে পাচার করা হয়। ট্রলারে তোলার আগে দালালরা মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

তারা বলছেন, টেকনাফ, উখিয়া, রামু, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী উপকূল ও কর্ণফুলী নদী দিয়ে সমুদ্রপথে মানবপাচারের ঘটনা বাড়ছে। এরই মধ্যে মানবপাচারের ঘটনায় বেশ কিছু গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে।

আরও পড়ুন: নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, শিক্ষক হওয়া হলো না শহীদ আবু সাঈদের

পুলিশ জানায়, গত শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহায় অভিযান চালিয়ে ১৭ রোহিঙ্গাবোঝাই একটি ট্রলার আটক করে কোস্টগার্ড। এ সময় মানবপাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার তিন পাচারকারী হলো মহেশখালীর কালামারছড়ার ধলা মিয়ার ছেলে ফজল করিম প্রকাশ ফুতু মাঝি (৪৭), উখিয়া জালিয়াপালং ইউনিয়নের মাহবুবুল আলমের ছেলে এনামুল করিম (৩৭) এবং কক্সবাজার সদরের উলা মিয়ার ছেলে গোলাম হোসেন (৪০)। আটক ১৭ রোহিঙ্গার সবাই টেকনাফের মৌছনী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা।

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল দিয়ে মানবপাচার বাড়ছে জানিয়ে হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ফোরাম, কক্সবাজারের সভাপতি আইনজীবী আবদুস শুক্কুর বলেন, এ ক্ষেত্রে দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের টার্গেট করছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা মেয়েদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়ায় পাচার করছে। সম্প্রতি টেকনাফ ও মহেশখালীতে কয়েক দফায় শতাধিক রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। ২০১৬ সালে টেকনাফ উপকূল দিয়ে মানবপাচার শুরু হয়। গত কয়েক বছরে মালয়েশিয়ায় পাচারকালে ২০টির বেশি ট্রলারডুবির ঘটনায় অন্তত ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

পুলিশ জানায়, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচারের সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১ হাজার ১৩৪ জনকে উদ্ধার করে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ রোহিঙ্গা নাগরিক। ওই সময়ে উখিয়া ও টেকনাফ থানায় ৮৫টি মামলা করা হয়। মামলাগুলোয় ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হলেও ধরা পড়েছে ৫০৮ জন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence