পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি বাতিলে প্রতিবাদ

  © সংগৃহীত

পাঠ্যপুস্তক সংশোধন-পরিমার্জনে গঠিত কমিটি বাতিলকে ‘অগণতান্ত্রিক নতজানু সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ  অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সম্মানিত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করতে বলা হয়।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকবৃন্দের ব্যানারে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের ভূমিকা থাকলেও আন্দোলন পরবর্তী সময়ে এসে আমরা দেখছি, অভ্যুত্থানের বিভিন্ন অংশী-জনদের নানা ভাবে তকমা দিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে তাদের জীবনকে অনিরাপদ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষকরা শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন সংকট তুলে ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যখন প্রবল ফ্যাসিস্ট দমন-পীড়নের মুখে, সেসময় যে শিক্ষকরা সবার আগে শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তাদেরকে এখন নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এগুলো চরম অগণতান্ত্রিক এবং জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিরোধী। 

বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এনসিটিবি পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড.কামরুল হাসান মামুন এবং সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফাকে অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু সম্প্রতি শায়খ আহমদুল্লাহ সহ বিভিন্ন মহল থেকে এই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে উক্ত কমিটি থেকে তাদের বাদ দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। 

তারা আরও বলেন, এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা বরং তাকেই খারিজ করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন-পরিমার্জন কমিটি বাতিলের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এটি চরম অগণতান্ত্রিক এবং সরকারের নতজানু নীতির বহিঃপ্রকাশ। গত ষোল বছরে শিক্ষা আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাদের কোন ভূমিকা চোখে পড়েনি তারা এখন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সেই ট্যাগিং এর রাজনীতিকেই ব্যবহার করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হকের সঞ্চালনায় গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য সীমা দত্তের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রুশাদ ফরিদি, ডাক্তার হারুন-অর-রশিদ, অ্যাক্টিভিস্ট ও গবেষক মাহতাব উদ্দিন, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট বাকি বিল্লাহ, সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট অনিক রায়, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জামশেদ আনোয়ার তপন, সচেতন অভিভাবক সমাজের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম, অভিভাবক নাসির উদ্দীন বিশ্বাস, কবি ফেরদৌসী আরা রুমী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক সুস্মিতা রায় সুপ্তি, অভিভাবক মারজান আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেঘমল্লার বসু প্রমুখ।

সমাবেশে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দ্রুত পাঠ্যপুস্তক সংস্কার কার্যক্রম চলমান রাখার দাবি জানানো হয়।

উল্লেখ্য, ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রণীত ও মুদ্রিত সব পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। আজ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়ানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। 


সর্বশেষ সংবাদ