ভ্যানে লাশের স্তূপ: আরও ২ পুলিশ কর্মকর্তা শনাক্ত

আরও ২ পুলিশ কর্মকর্তা শনাক্ত
আরও ২ পুলিশ কর্মকর্তা শনাক্ত   © সংগৃহীত

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভ্যানে লাশের স্তূপের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। লোমহর্ষক এ ভিডিও ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত কয়েকজন ব্যক্তির। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভ্যানে কয়েকটি মরদেহ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আরেকটি মরদেহ ভ্যানে তুলে দিচ্ছে পুলিশ। পরে একটি পোস্টার দিয়ে মরদেহগুলো ঢেকে ফেলা হয়। আশুলিয়া থানা এলাকায় ভয়াবহ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। 

তারা হলেন- আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক আবুল হাসান ও সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ। এর আগে, ঘটনাস্থলে থাকা ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেনকে শনাক্ত করা হয়। ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর আত্মগোপনে চলে গেছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা।

এদিকে ভয়াবহ ওই গণহত্যার ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সাজিদুর রহমানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কমিটির সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে যাচাই-বাছাই করছেন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকেই আমরা ছাড় দেব না।

কি ঘটেছিল সেদিন?
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, ৫ আগস্টের দিন আন্দোলনকারীরা থানার সামনে অবস্থান নেন। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও গুলি করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে। সে সময় সেখানে উপস্থিত থাকা স্থানীয় একজন সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এটা আশুলিয়ার থানার একদম পাশেই। পুলিশ যখন গুলি করে তখন, বেশ কয়েকজন নিহত হয়। এখানে সেখানে লাশগুলো পড়ে থাকে। এ অংশটুকু আমার নিজে চোখে দেখা।’

তিনি জানান, এক পর্যায়ে আশেপাশে পড়ে থাকা ছয়জনের মরদেহ পুলিশ একটা ভ্যানের মধ্যে ওঠায়, যেটার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। থানার সামনে দোতলা ভবনের জানালা দিয়ে একজন এ ভিডিও ধারণ করেন। তবে এই মরদেহগুলো কিভাবে পুলিশের গাড়িতে গেলো সেটা জানা যায়নি বলে জানান এ সাংবাদিক। অনেকেই ধারণা করছে, পুলিশই অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে গাড়িতে মরদেহগুলো রেখেছিল।

তিনি বলেন, ‘যখন আন্দোলনকারীরা থানায় হামলা চালায়, থানার সামনে আশেপাশে যত গাড়ি ছিল সবগুলোতেই আগুন ধরায়ে দিয়েছিল। তেমনই একটা পুলিশের গাড়িতে ছিল লাশগুলো। ওইগুলাও কিন্তু আগুনে পুড়ে যায়, একেবারেই ছয়টাই।’

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই থেকে আন্দোলন করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় গত ১৫ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে গুলি চালায় পুলিশ।

পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচি ঘিরে গত ৪ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে সরকার সমর্থিত নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েক শতাধিক নিহতের খবর পাওয়া যায়। এ অবস্থায় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগ করে ভারত চলে যান।


সর্বশেষ সংবাদ