ভোলা
শিক্ষাবিমুখ জেলে পাড়ার অধিকাংশ শিশু, জড়াচ্ছে বাপ-দাদার পেশায়
- ভোলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ০৮:৩৭ AM , আপডেট: ১৯ মে ২০২৪, ০৮:৫৬ AM
মাত্র ১৬ বছরের কিশোর মো. রাব্বী। তার এই বয়সী অন্যান্য কিশোররা বই-খাতা নিয়ে যাচ্ছে স্কুলে। অথচ কিশোর রাব্বীর একদিনের জন্যও যাওয়া হয়নি স্কুলে। সে রোজ নিয়ম করে যাচ্ছে নদীতে মাছ শিকারে। গত ৬ বছর ধরে মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে অন্যান্য জেলেদের সঙ্গে মাছ শিকার করছে কিশোর রাব্বী। তার মতো ভোলার লালমোহন উপজেলার জেলেপল্লীর এমন অসংখ্য শিশু-কিশোর পড়ালেখা না করে নদীতে মাছ শিকার করছে। উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের বাতিরখাল মৎস্যঘাট এলাকার বাসিন্দা কিশোর রাব্বী।
সে জানায়, তাদের অসচ্ছল পরিবার। পরিবারের পক্ষে পড়ালেখার খরচ জোগানোর সাধ্য নেই। যার জন্য গত ৬ বছর ধরে স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছে সে। যেদিন নদীতে মাছ ধরতে নামেন সেদিন গড়ে ৩০০ টাকার মতো পান। এই টাকা থেকে কিছু নিজেও খরচ করেন, পরিবারকেও দেন।
বাতিরখাল মৎস্যঘাট এলাকার ১০ বছর বয়সী শিশু মো. রিপন। তার জীবনও দোলে নদীর ঢেউয়ে। শিশু রিপনের এই বয়সে থাকার কথা স্কুলে। অথচ সেও মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে নদীতে মাছ শিকার করে। তার পরিবারে মা-বাবা, এক ভাই-এক বোন আছে। বাবা চট্টগ্রামে কাজ করেন বালুর জাহাজে।
শিশু রিপন জানায়, স্বজনদের সঙ্গে প্রথমে শখ করে নদীতে যাওয়া শুরু করে সে। সেই শখই এখন পেশা। প্রথম প্রথম নদীর উত্তাল ঢেউ দেখে ভয় হতো। তবে এখন সে ভয় কেটে গেছে। এখন স্থানীয় অন্যান্য জেলেদের সঙ্গে নিয়মিত মাছ শিকারে যাচ্ছে সে। যেদিন মাছ শিকারে যান সেদিন কখনো ২০০, কখনো ৫০০ টাকা পান। আবার কখনো খালি হাতেই ফিরতে হয়। যখন নদীতে গিয়ে মাছ ধরে টাকা পান, সেদিন ওই টাকা মায়ের হাতে তুলে দেন।
একই মৎস্যঘাটের ১৪ বছর বয়সী আরেক শিশু মো. আল-আমিন। বিদ্যালয়ের বারান্দায় তার পা পড়েছে ঠিকই। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কোনো রকমে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হয়েছিল ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। তখন থেকে মাঝে মধ্যে স্বজনদের সঙ্গে নদীতে যাওয়া শুরু হয় শিশু আল-আমিনের। একপর্যায়ে নদীতে মাছ শিকার করা তারও পেশা হয়ে যায়। মাছ শিকার পেশা হওয়ায় শিশু আল-আমিন ছেড়ে দিয়েছে পড়ালেখা। এখন তার রোজ যুদ্ধ দক্ষ জেলে হওয়ার।
জেলেপল্লীর শিশুদের এমন শিক্ষা বিমুখতার বিষয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি এনজিও সংস্থা ‘দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির’ নির্বাহী পরিচালক মো. ইউনূছ বলেন, পরিবারের দরিদ্রতা, অসচেতনতা এবং স্কুল দূরবর্তী স্থানে হওয়াসহ আরও বেশকিছু কারণে জেলেদের অধিকাংশ সন্তানরা তেমন পড়ালেখা করছে না। যার কারণে এসব শিশুরা খুব কম বয়সেই তাদের বাপ-দাদার পেশায় জড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব শিশু এবং তাদের পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি আর্থিক বরাদ্দ প্রয়োজন। এর মাধ্যমে জেলেপল্লীর শিশুদেরও শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা সম্ভব।
লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, জেলেপল্লীর যেসব শিশুরা বিদ্যালয় বিমুখ বা ঝরে পড়ছে, তাদেরকে শিক্ষার আওতায় আনতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমরা চাই প্রতিটি শিশুই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক। এছাড়া জেলেদের জন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতে যদি সরকারিভাবে জেলেদের জন্য আরো কোনো বরাদ্দ আসে আমরা তা জেলেদের যথা সময়ে পৌঁছে দেব।