মায়ের জন্মদিনে পৃথিবীতে এসেছিল ফাইরুজ, প্রাণও গেল একই দিনে

মা মেহেরুন নেসা জাহান ও তার সন্তান ফাইরুজ কাশেম জামিরা
মা মেহেরুন নেসা জাহান ও তার সন্তান ফাইরুজ কাশেম জামিরা  © সংগৃহীত

রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া নিহত ফাইরুজ কাশেম জামিরা নামে শিশুটির বয়স মাত্র আড়াই বছর। বাবা শাহজালাল উদ্দিন (৩৫) ও মা মেহেরুন নেসা জাহান হেলালিও (২৫) আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।

মেহেরুন নেসার জন্ম তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর। তার সন্তানের জন্মও হয় একই তারিখে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, মা ও সন্তানের পরপারের ঠিকানাও হলো একই দিনে। মেয়ে, জামাতা ও নাতিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মেহেরুনের বাব মুক্তার আলম হেলালী।

তিনি জানান, তার জামাতা শাহজালাল উদ্দিন পানগাঁও কনটেইনার ডিপো কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ছিলেন। পরিবার নিয়ে বসুন্ধরা রিভারভিউ আবাসিকে থাকতেন তিনি। তাদের খাগড়াছড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। মোবাইল ফোনে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে ঢামেক হাসপাতালে এসে লাশ পেয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের মেঝেতে শুইয়ে রাখা শিশুটির মরদেহ দেখা গিয়েছিল গতকাল শুক্রবার সকালে। বুকের কাছে সাঁটানো কাগজে লেখা ছিল অজ্ঞাতনামা। মাথায় ঝুঁটি বাঁধা, ধূসর রঙের হাফহাতা গেঞ্জি আর নীল পায়জামা পরা শিশুটির মরদেহ দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন সবাই। তার হাতে ছাইয়ের দাগ থাকলেও শরীরের কোনো অংশ পোড়েনি। ধোঁয়ায় অক্সিজেন স্বল্পতায় শিশুটি মারা গেছে বল ধারণা করা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: নিহত ৪৬ জনের মধ্যে ১৫ জনই শিক্ষক-শিক্ষার্থী

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি ভবনে মা-বাবার সঙ্গে গিয়েছিল শিশুটি। আগুনে প্রাণ গেছে তার। অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ গেছে তার মা-বাবারও। তিনজনের মরদেহ গতকাল রাতেই শনাক্ত করেছেন শিশুটির নানা।

137022_161 শুষ্ক কর্মকর্তা, তার স্ত্রী ও সন্তান সবাই একসঙ্গে মারা গেছেন

শিশুটির খালা মুক্তারুন নিসা হেলালি শনিবার জানান, সকাল থেকে তাঁরা মর্গের সামনে অপেক্ষা করেছেন। তিনজনের মরদেহ নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা কক্সবাজারের উখিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। সেখানে পূর্ব গোয়ালিয়া গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে তিনজনের দাফন সম্পন্ন হবে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ফাইরুজের মা মেহেরুনের জন্মদিন ১৪ সেপ্টেম্বর। একই দিনে ফাইরুজ জন্ম নেয়। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মা-মেয়ের জন্মদিন উদ্‌যাপনও করা হয়। কেউ জানত না তাঁদের মৃত্যুর দিনটিও এক হবে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় মামলা করা করেছে। শুক্রবার (১ মার্চ) দিবাগত রাতে রমনা থানা পুলিশ বাদী হয়ে করা ওই মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। এর আগে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবনটিতে অবস্থিত চায়ের চুমুকের দুই মালিক ও কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তথ্য জানতে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে আরও কয়েকজনকে।

এদিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট এবং র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগেরই ‘এক্সটার্নাল বার্ন’ কম ছিল। এ অবস্থায় মৃতদের অধিকাংশই কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়ায় নিহত হয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence