চাকরি হারিয়ে এখন উবার চালক ‘প্রধান শিক্ষক’ সুরমান

চাকরি হারিয়ে এখন উবার চালক ‘প্রধান শিক্ষক’
চাকরি হারিয়ে এখন উবার চালক ‘প্রধান শিক্ষক’   © সংগৃহীত

মিথ্যা অভিযোগে চাকরির হারিয়ে বর্তমানে উবার ও পাঠাও চালক হিসেবে কাজ করছেন রাজধানীর নীলক্ষেত হাইস্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক সুরমান আলী। ২৮ মাস ধরে চাকরিহীন অবস্থায় পরিবারের ভরণপোষণে বাধ্য হয়ে এখন ‘উবার’ আর ‘পাঠাও’ চালাচ্ছেন।

জানা গেছে, ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অভিযোগে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বেনামি এক অভিযোগের ভিত্তিতে নীলক্ষেত হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি তাঁকে ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও ২০২২ সালের ৯ মে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

অশ্রুসিক্ত সুরমান আলী জানান, ২৮ মাস ধরে তার চাকরি নেই। দুই সন্তান, স্ত্রী, মাসহ পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম তিনি। ছেলে নটর ডেম কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে আর মেয়ে মহল্লার একটি বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। চাকরি ফিরে পেতে গত দুই বছর শিক্ষা বোর্ড আর আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে তিনি হয়রান। মামলা চালাতে গিয়ে সব সঞ্চয় ভেঙেছেন।

আরও পড়ুন: শিক্ষকের টাকা ধার নিয়ে ১৪ মাসেও দিচ্ছেন না চবি ভিসির মেয়ে।

তবে এখন পর্যন্ত অভিযোগকারী পত্রদাতাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সুরমান আলী। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আরবিট্রেশন বোর্ডে তার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর তাঁকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দিলেও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি সেই নির্দেশ না মেনে উল্টো তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করছে।

সুরমান আলী জানান, অন্যায়ভাবে তাকে চাকরিচ্যুত করার ঘটটনায় প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক তাঁর পক্ষে লিখিতভাবে সমর্থন জানান। এখন সেই শিক্ষকদেরও প্রতিষ্ঠান নানাভাবে হয়রানি করছে ও চাকরিচ্যুতির হুমকি দিচ্ছে।

এদিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা যায়, সুরমান আলীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, অর্থ আত্মসাৎ ও একজন শিক্ষকের এমপিওভুক্তিতে জালিয়াতির তিন অভিযোগ এনে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের প্রমাণ পায়নি। এ কারণে স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধসহ সুরমান আলীকে প্রধান শিক্ষক পদে পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারি এ নির্দেশকে পাত্তা দেয়নি।

নীলক্ষেত হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশীদ বলেন, সুরমান আলী উবার চালান, সেটি জানা ছিল না। এটি খুব বেদনাদায়ক। আমাদের সমাজে শিক্ষকদের এত বেশি টাকা-পয়সা থাকে না। কিছু অভিযোগে সুরমান আলী চাকরিচ্যুত, যা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। রায় পেলে সেই অনুসারে ব্যবস্থা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ