ছাত্রলীগ নেতার পরীক্ষা ঠেকাতে গিয়ে মারধরের শিকার গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থী
- জাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ০৯:২৯ AM , আপডেট: ১৯ মে ২০২৫, ১২:২৫ PM

জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবিপ্রবি) অ্যাকাডেমিক পরীক্ষা দিতে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পালিয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহবায়ক সেবক দাস। তাঁকে আটকাতে গিয়ে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া এক শিক্ষার্থী মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৪ মে) এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ছাত্রলীগের নেতা সেবক দাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্স ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি জুলাই আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দিতেন। আর তাঁর পরীক্ষা দেওয়া ঠেকাতে গিয়ে মারধরের শিকার হন সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী সৈকত ইসলাম।
জানা যায়, সেবক দাস পরীক্ষা দিতে আসার খবর পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভাগের পরীক্ষার হলরুমের সামনে গিয়ে দরজা-জানালা বন্ধ দেখে সন্দেহ করেন। তখন ডিউটিতে থাকা শিক্ষক এবং আগের প্রশাসনের প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে বলেন, তাকে (সেবক) বের করে দিতে। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানিয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
তখন তারা বিভাগের আওয়ামীপন্থী এ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বিভিন্ন নিয়ম দেখিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের পরীক্ষা দেওয়ার পক্ষে কথা বলেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা আবার পরীক্ষার হলরুমে সামনে যান এবং ছাত্রলীগ নেতাকে বের করে দিতে বলেন। কিছু সময় পর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান ও ছাত্র কল্যাণ ও পরামর্শ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম আসেন।
এভাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর শিক্ষার্থীরা তাদের কোনও কথা না শুনে তাকে পরীক্ষার হল থকে বের করে নিয়ে আসতে চাইলে ছাত্র কল্যাণ ও পরামর্শ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এবং প্রক্টরের সঙ্গে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে বেরিয়ে আসতে দেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকরা। তখনই ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান দরজায় লাথি মারার অভিযোগ তুলে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের উস্কে দিলে পরীক্ষারত সেবক দাসের বন্ধুরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষিপ্ত হন।
তারা ছাত্রলীগ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এলে শিক্ষার্থীরাও তার সঙ্গে চলে আসেন। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সমনে এনে আরেক ছাত্রলীগ নেতা হাসিবুল হাসান রনির বাইকে উঠিয়ে দেন। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী সৈকত ইসলাম পালাতে বাঁধা দেওয়ায় তাঁকে মারধর করেন ছাত্রলীগের আরেক নেতা রুবেল মিয়া ও তাঁর বন্ধু রাহাত গালিব সিক্ত। তখন বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা পালিয়ে যান।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৈকত ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। জানা গেছে, পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মো এনামুল হক এবং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাল্টা মবের অভিযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রলীগের জাবিপ্রবি শাখার আহবায়ক স্বাধীন এবং যুগ্ম-আহবায়ক পলাশের হয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করতো। তার বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়াসহ আন্দলনের বিপক্ষে গিয়ে স্বৈরাচারী সরকার ঠেকাতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে নবীনবরণ শেষে উদ্যানে, সাম্য হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে বর্ণনা দিলেন সঙ্গে থাকা দুই বন্ধু
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুতই গণশুনানির মাধ্যমে ছাত্রলীগের বিচার করব। সৈকত যে অভিযোগ করেছে, সেটারও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে বিচার করা হবে।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সৈকত ইসলাম বলেন, ‘যখন ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রলীগের সেবক দাসকে ক্যাম্পাস থেকে যখন পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন, তখন আমি বাধা দিতে গেলে কতিপয় উগ্র শিক্ষার্থী এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্য আমাকে মারধর করে। আমার ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন হাসিবুল হাসান রনি। জুলাই আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে থেকে আন্দোলন করেছিলাম, আর আজকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে গিয়ে মার খেলাম।’ যারা ছাত্রলীগের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেছে, তাদেরকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাত গালিব সিক্ত বলেন, ‘যখন সৈকত মোটরসাইকেল ঠেকানোর জন্য এগিয়ে যান, তখন সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলাম।’