‘শিক্ষকদের শিক্ষক’ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক

প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক
প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক  © ফাইল ছবি

প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত ছিল প্রাচ্যতত্ত্ব, ইতিহাস ও রাজনীতিতে। বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তিতুল্য শিক্ষাবিদ এবং বুদ্ধিজীবী হিসেবে তিনি সমাদৃত। প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক পরিচিত ‘শিক্ষকদের শিক্ষক’ হিসেবে। তার পাণ্ডিত্যের জন্য ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পিএইচডি প্রদান করে ১৯৭৩ সালে। আর বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে মনোনীত করে ১৯৭৫ সালে। তার অনুগামীদের মধ্যে শুধু বুদ্ধিজীবীরা নন পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্বরাও ছিলেন।

প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং উচ্চ-মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন ঢাকা কলেজ থেকে। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন ১৯৩১ সালে। তিনি প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন ১৯৩৬ সালে। 

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মেলবন্ধন কতদূর?

এরপর, লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে পিএইচডি করার জন্যে লন্ডন যান তিনি। তার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন আরেক পণ্ডিত অধ্যাপক হ্যারল্ড জে. লাস্কি। লাস্কি পরলোকগমন করায় তিনি থিসিস জমা না-দিয়েই অর্থাৎ কোনো ডিগ্রি না নিয়েই দেশে প্রত্যাবর্তন করেন প্রফেসর রাজ্জাক। অবশ্য প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক তার থিসিস মূল্যায়ন করার মতো কেউ নেই এমন বক্তব্য দিয়েই থিসিস জমা দেননি।

আব্দুর রাজ্জাক সম্পর্কে তার শিষ্য আহমদ ছফা তার ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইতে লিখেছেন, ‘প্রফেসর রাজ্জাকের চরিত্রের প্রণিধানযোগ্য বৈশিষ্ট্যটি আমি সব সময়ে সশ্রদ্ধ বিস্ময়ে লক্ষ করে আসছি, সেটি হল তাঁর নিজের দেশ, সমাজের প্রতি নিঃশর্ত অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকারবোধই প্রফেসর রাজ্জাককে অন্য সকলের চাইতে আলাদা করেছে।

রাজ্জাক সাহেব মনে-প্রাণে একজন খাঁটি সেক্যুলার মানুষ। কিন্তু বাঙালি মুসলমান সমাজের সেক্যুলারিজমের বিকাশের প্রক্রিয়াটি সমাজের ভেতর থেকে, বাঙালি মুসলমানের সামাজিক অভিজ্ঞতার স্তর থেকে বিকশিত করে তুলতে হবে, একথা তিনি মনে করেন।

পড়ার কাজটি অইল অন্যরকম। আপনে যখন মনে করলেন, কোনো বই পইড়্যা ফেলাইলেন, নিজেরে জিগাইবেন যে বইটা পড়ছেন, নিজের ভাষায় বইটা আবার লিখতে পারবেন কিনা। আপনের ভাষার জোর লেখকের মতো শক্তিশালী না অইতে পারে, আপনের শব্দভান্ডার সামান্য অইতে পারে, তথাপি যদি মনে মনে আসল জিনিসটা রিপ্রোডিউস না করবার পারেন, ধইরা নিবেন, আপনের পড়া অয় নাই।’

আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা: মেধা আর অর্থ দুটোরই অপচয়

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ১৯৩৬ সালে। পরবর্তীতে একই বিভাগ থেকে অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান দুটি পৃথক বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন। পদোন্নতির আবেদন না করায় তিনি দীর্ঘকাল জ্যৈষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। 

তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘কন্যাকুমারী’ তার একটি বিখ্যাত উপন্যাস। প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক তার অসাধারণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কারণে কিংবদন্তির খ্যাতি অর্জন করেন। আহমদ ছফা তাকে নিয়ে বিখ্যাত ‘যদ্যপি আমার গুরু’ নামে একটি বই রচনা করেন ১৯৯৮ সালে। সম্প্রতি সলিমুল্লাহ খান সম্পাদনা করে প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের থিসিস ‘পলিটিক্যাল পার্টি'স অব ইন্ডিয়া’ প্রকাশ করেন। যেখানে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের ক্ষেত্রে একক মুসলিম লীগকে দায়ী না করে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কংগ্রেসের ভূমিকাও তুলে আনা হয়।

প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের মতো নির্মোহ জীবন ও নির্লিপ্ত সত্যপ্রীতি, জ্ঞানের রাজ্যে অগাধ বিচরণ তাকে ‘শিক্ষকদের শিক্ষক’ হিসেবে সমাদৃত রাখবে বর্তমান যুগের মুষ্টিমেয় শিক্ষকদের নৈরাজ্যের কালেও।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence