আসুন, মানবতার স্বার্থে সবাই এগিয়ে আসি

মো. এরশাদ হালিম
মো. এরশাদ হালিম  © টিডিসি ফটো

বন্যায় ভেসে যাচ্ছে দেশের অধিকাংশ অঞ্চল। বানভাসী এলাকার মানুষজন বন্যার পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। সে হৃদয় বিদারক এক দৃশ্য। একমাত্র মহান আল্লাহর করুণা ভিক্ষা এবং জাতীয় সংহতিই পারে এই প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক ও মানব সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা করতে। তাই সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমাদের এখন উচিত বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফার করা এবং ত্রাণ তৎপরতায় সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা। পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বিভিন্ন বালা-মুসিবত আমাদেরকে অনেক সমস্যা সমাধানের পথ প্রশস্ত করে দেয়। মানুষ মানুষেরই জন্য। 

ত্রাণ তৎপরতার সুবিধার্থে এবং বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী-জনতা আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সৃষ্ট অচলাবস্থা দূরীকরণে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের নিমিত্ত আমার বিনীত অনুরোধ: 

(১) বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিকে বিশেষ উদ্যোগে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকগণের কমপক্ষে এক দিনের বেতন জরুরি ভিত্তিতে কর্তন করা এবং বন্যার্তের সহযোগিতায় দান করা। 

(২) বন্যার্ত মানুষের ত্রাণ কাজে সহযোগিতা লক্ষ্যে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপক্ষে এক দিনের বেতন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিজ উদ্যোগে গঠিতব্য কোন ত্রাণ তহবিলে সংগ্রহ করা।

(৩) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী সমন্বয়কদের বিশেষ উদ্যোগে সারা দেশের সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ত্রাণ কাজ পরিচালনায় এলাকা ভিত্তিক বিশেষ টিম গঠন করা এবং স্থানীয় সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা।

(৪) সকল ছাত্র সংগঠনগুলোকে বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে একযোগে কাজ করা। আচার-আচরণে তাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাতারে চলে আসার কোন বিকল্প নেই। অতীতে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হারানো সম্মান কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধারের মোক্ষম সুযোগ এটাই।

(৫) বিশ্ববিদ্যালয়ের যে-সব শিক্ষক বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী-জনতা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে মানবতা বিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিলেন তাদের অনেকেই এখন বেশী বেশী দান-সাদাকার মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মন জুগিয়ে নিজেদের পাপ মোচনের চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টা মন্দ নয়, এটাই স্বাভাবিক। ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো ধরে হলেও বাঁচতে চায়। 

বস্তুত এটা এক ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য তবে স্মরণ রাখা দরকার যে, আমাদের শিক্ষার্থীরা কোমলমতি হলেও যথেষ্ট মেধাবী। তাদেরকে এতটা বোকা ভাবার কোন কারণ নেই। তাই কৃত অপরাধের জন্য তাদের স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিকট ক্ষমা চাওয়ার কোন বিকল্প নাই। এটা তাদেরকে করতেই হবে। নচেৎ আমরা শিক্ষক সমাজ শিক্ষার্থীদের কাছে চির অপরাধীই থেকে যাব। পাশাপাশি ছাত্র-শিক্ষক আস্থার সংকট স্থায়ীভাবে কখনোই কাটবে না যেভাবে ফাটা আয়না জোড়া লাগলেও দাগ চলে যায় না।

(৬) শিক্ষকদের ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে কর্তব্য-কর্মে নিজেদের অবহেলা এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের পক্ষে নিজেদের স্বীকারোক্তিই প্রশমিত করতে পারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অন্তর্দহণ যেভাবে তাওবার মাধ্যমে মানুষের কৃত গুনাহসমূহ বিলীন হয়ে যায়। দূরীভূত হয় সৃষ্টিকর্তার ক্রোধ। তাওবাকারীকে মহান আল্লাহও ভালোবাসেন। এই সুযোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্থিতিশীলতা অনেকাংশেই কমে আসতে পারে এবং আসাটাই জরুরি। 

(৭) বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রশাসনগুলোরও উচিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন পরিস্থিতি ও প্রবৃত্তির তাড়না থেকে নিজেদের সংঘটিত অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে দায়িত্বহীন কার্যকলাপের জন্য স্ব স্ব হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং নিজেদের তত্ত্বাবধানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ত্রাণকার্য পরিচালনা শুরু করে দেয়া। এ সুযোগে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিয়ে তারা তাদের অবস্থান আবার সুসংহত করে নিতে পারে।

(৮) পুলিশ জনগণের শত্রু নয়, বরং বন্ধু। তাদেরকে জনগণের কাছে আর নিরাপত্তা চাইতে হবে না যদি এ সময় তারা ত্রাণ কার্য পরিচালনায় সততা ও নিষ্ঠার সাথে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে তাদের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনে এবং সুযোগ বুঝে সাধারণ জনগণের নিকট ক্ষমা চেয়ে নেয়। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তাদের একযোগে কাজ করার কোন বিকল্প নেই।

(৯) সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা করা অত্যাবশ্যক। জাতির ক্রান্তিলগ্নে মানবতার স্বার্থে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করা অপরিহার্য।

(১০) গৃহবধূরাও বুদ্ধি খাটিয়ে নিজেদের নিকট সঞ্চিত ও গচ্ছিত অর্থ ব্যয় করে বন্যার্তদের জন্য খাবার তৈরি এবং স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে সরবরাহের মাধ্যমে জাতীয় ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রাখতে পারে। মনে রাখা বাঞ্ছনীয় যে, গৃহবধূদের পেশা নারীদের সর্বোত্তম পেশা। এটাকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ আদৌ নেই। 

তারাও এভাবে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্দার আড়াল থেকে কাজ করতে পারে। একজন নারীর পক্ষে সমাজের কাছে নিজের গঠনমূলক কাজ-কর্মকে নিবেদন করে এভাবে নিজেকে সম্মানিত করার অনেক পথ রয়েছে। তখন নারী-পুরুষের সম অধিকারের ভাঙ্গা রেকর্ড বাজানোর প্রয়োজন আর পড়বে না, কারণ দায়িত্ব ও অধিকার একে অন্যের পরিপূরক।

(১১) পাশাপাশি সম্মানিত আলেমগণের উদ্যোগে স্থানীয় পাড়া ও মহল্লাগুলোতে আল্লাহর রহমত কামনায় বিশেষ দোয়া-মাহফিল আয়োজনের ব্যবস্থা করা অতীব জরুরী। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর স্মরণীয় বানী, ‘আদেশ হল, হে জমীন তোমার পা‌নি গিলে ফেল, হে আকাশ, পা‌নি বর্ষণ বন্ধ ক‌র’ (সূরা হূদ, আয়াত- ৪৪)।

পরিশেষে, বিপদ-আপদ মহান আল্লাহ প্রদত্ত পরীক্ষা মাত্র। কাজেই এটাকে গুনাহ মোচনের সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। বিপদকে শোক না ভেবে পরিণত করতে হবে শক্তিতে। দুঃখের আগুনে পুড়েই মনুষ্য জীবন সোনা হয়। আল্লাহ সর্বশক্তিমান, তিনিই ত্রাণকর্তা।

লেখক: অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence