কাশফুলের সৌন্দর্যে মুখরিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

কাশফুলের সৌন্দর্যে মুখরিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
কাশফুলের সৌন্দর্যে মুখরিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

কীর্তনখোলা নদীর কোল ঘেসে অবস্থিত প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। আর ছয়টি ঋতুতেই এদেশের প্রকৃতি সাঝেঁ আলাদা আলাদা রূপে। তেমনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও ছয়টি ঋতুতেই দেখা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি ঋতুতেই আলাদা আলাদা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শরতকালের সৌন্দর্য অন্য ঋতুগুলোর থেকে অনেক বেশি সুন্দর। আর এই সৌন্দর্যের প্রধান উপকরণ শরতের শুভ্র কাশফুলের সমারোহ।

বর্ষার শেষে নীল আকাশে সাদা-মেঘের ভেলা আর কাশফুলের শুভ্র সৌন্দর্য নিয়ে শরৎ আসে। শরতের প্রধান আকর্ষণ হলো সাদা শুভ্র কাশফুল। এই কাশফুল বা কাশবন নিয়ে বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকরা কবিতা, গান, উপন্যাস ইত্যাদি রচনা করেছেন।তেমনি একজন কবি লিখেছেন,

 “শরৎ সেজেছে কাশফুলের
  থরে বিথরে বালুচরে।
    সাদা মেঘের শতদল উড়ছে
   অপরূপা নীলাম্বরে।”

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে শুভ্রতা ছড়াচ্ছে কাশফুল। প্রতিদিন এই কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ আসে। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যস্ততার মাঝে অবসর পেলেই  চলে আসে কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই দেখা যায় কাশফুলের মহাসমারোহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তার দুপাশে, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, কেন্দ্রীয় মসজিদের চারপাশ ও হল সংলগ্ন মাঠসহ বিভিন্ন চত্বরে ভরে গেছে কাশফুলে। কাশফুলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলকেই।

বিকাল হলে দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা আসে কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কেউ আসে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে, কেউ বা আসে তার প্রিয়তমাকে নিয়ে, আবার কেউ আসে পরিবার নিয়ে। প্রেমিক যুগল ও নবদম্পতিরা হাটছে একে অপরের হাত ধরে, তুলতেছে ছবি।

আরও পড়ুন: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কাশফুল

বন্ধুরা মিলে খোলা আকাশের নিচে বসাচ্ছে গানের আড্ডা আর সংগঠনগুলোর মিটিং। আবার মাঠের ঘাসের উপর এবং চত্বরগুলোতে গোল হয়ে বসে অনেকেই করছে গ্রুপ স্টাডি। এই শুভ্র কাশফুলের সৌন্দর্য যে কারোর মন মুহূর্তেই ভালো করে দিতে পারে।

কাশফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা শিমু বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মনোরম সৌন্দর্যের অনাবিল লীলাভূমি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন ঋতুতে নবসাজে সেজে ওঠে এই ক্যাম্পাস। তবে শরৎকাল যেনো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটু বেশিই আপন করে নেয়। ঋতু রানী শরৎকাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে এক অন্য রকম সজীবতা, রঙ-রূপ ও স্নিগ্ধতা।

স্বপ্নের ক্যাম্পাসে আসার কিছুদিন পরেই শরতের আবির্ভাব, এই শরৎকাল নিয়ে এসেছে কাশফুলের সমারোহ, পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে শুধু পালকের মতো নরম ও ধবধবে সাদা     কাশফুল। ক্যাম্পাসের যতোদূর চোখ যায় ততোদূর এই কাশফুলের অসাধারণ সৌন্দর্যে পুলকিত হয় মন।মনে হয় কাশফুলের এক স্বর্গরাজ্য হলো বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

প্রতিদিন ক্লাস শেষে বান্ধবীদের সাথে ক্যাম্পাসে হেঁটে হেঁটে কাশফুলের সৌন্দর্য দেখা এক অন্যরকম আনন্দ বয়ে আনে মনে। মনোরম সৌন্দর্য মণ্ডিত কাশফুলের সাথে শাড়ি পরে সব বান্ধবী মিলে ছবি তোলায় আরেক ভালো লাগা কাজ করে। আমরা যারা ভর্তি যুদ্ধ জয় করে ববিয়ান হয়েছি, আমরা যেন জয়ী হয়ে কাশফুলের স্বর্গরাজ্যে এসে পৌঁছেছি। পরিবার ছেড়ে এই নতুন অপরিচিত জায়গায় আসার যে বেদনা তা যেন এই সৌন্দর্য মণ্ডিত কাশফুলে ঘেরা ক্যাম্পাস ভুলিয়ে দেয়।

ববির কাশফুলের সৌন্দর্য দেখে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাসের মতো তুলে ধরতে না পারার আক্ষেপ আমার থেকেই যাবে হয়তো!

ববি শিক্ষার্থী আরিফ হোসাইন বলেন, ক্লাস, এসাইনমেন্ট, পরীক্ষা, চাকরির পড়া, সাংবাদিকতা ইত্যাদি নিয়ে যখন ক্লান্ত, তখন মনে আনন্দের খোরাক জোগায়, সতেজতা ছড়ায় কাশফুলের সৌন্দর্য। ক্লাসের ও হলের জানালা বা করিডর দিয়ে তাকালেই দেখা যায় হালকা বাতাসে দোল খাচ্ছে সাদা কাশফুল।

শরতের ধূসর মেঘের ভেলা ও সাদা-শুভ্র কাশফুলের মহাসমারোহ ববি ক্যাম্পাসকে নান্দনিক সৌন্দর্য দান করছে। তাই গোধূলিতে বন্ধুরা মিলে বেরিয়ে পড়ি প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করতে। যেদিকে তাকাই দেখতে পাই শাড়িতে জরানো নারী আর পাঞ্জাবিওয়ালা পুরুষ ক্যামেরাবন্দী হচ্ছে। 

বাকেরগঞ্জ থেকে আসা দর্শনার্থী নয়ন শিকদার বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জন্মানো কাশফুলের সৌন্দর্যের কথা শুনে ভাই-বোন নিয়ে এসেছি। এখানে এসে সত্যি অনেক ভালো লাগছে। এই সৌন্দর্য যেকেউ মুগ্ধ হবে, এ যেন কাশের দেশ!

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ