ফেলে এগিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা

  © প্রতীকী ছবি

মেডিকেল শিক্ষা সাধারণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির। দেশের অনেক মেডিকেলে, বিশেষ করে বেসরকারিগুলোতে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ খুব কম থাকে। ভরসা শুধু বইয়ে পড়া বিদ্যা। পাঁচ বছর পড়ার পর এমবিবিএস পরীক্ষায় বসে বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাই পাস করেন কম। পাস করা চিকিৎসকেরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে গেলে সেখানেও হোঁচট খান বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর স্নাতক পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি অকৃতকার্য হন মেডিকেলের এমবিবিএস পরীক্ষার্থীরা।

বর্তমানে দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৩৭। আর বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে ৭২টি। এর বাইরে ছয়টি মেডিকেল কলেজ সেনাবাহিনী পরিচালিত। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর প্রায় সাড়ে ১০ হাজার আসন রয়েছে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে সরকারি কলেজগুলোয় ৪ হাজার ৩০০ এবং প্রায় সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষার্থী বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।

চিকিৎসা শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের মতে, পদ্ধতিগতভাবে মেডিকেল শিক্ষা অন্যান্য শিক্ষার চেয়ে বেশ আলাদা। স্নাতক পর্যায়ের অন্যান্য ডিগ্রির তুলনায় এমবিবিএসের পাঠ্যক্রমের ব্যাপ্তিও অনেক বেশি। জীবনরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এ ডিগ্রির মূল্যায়ন পদ্ধতিও বেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ। পাসের ন্যূনতম মানদণ্ড অনেক ওপরে। এছাড়া শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতিতে পড়তে হচ্ছে। সর্বোপরি প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মতো পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফল প্রকাশের পর পাস-ফেলের হার নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। তবে বিকেন্দ্রীয় পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার কারণে স্নাতক বা এর পরবর্তী ধাপের পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশের উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রতি বছর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এ প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিগ্রিভিত্তিক পরীক্ষার্থী ও উত্তীর্ণের তথ্য প্রকাশ করা হয়।

ইউজিসির গত কয়েক বছরের প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি শিক্ষাবর্ষেই উত্তীর্ণের হারে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকছেন মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলো থেকে ১ হাজার ৯৬৫ জন পরীক্ষার্থী এমবিবিএস পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হন ১ হাজার ৩৭৯ জন। অর্থাৎ ওই শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭০ শতাংশ। যদিও একই শিক্ষাবর্ষে স্নাতক সম্মান পর্যায়ের ডিগ্রিগুলোয় গড় পাসের হার ছিল ৯২ শতাংশ। আর স্নাতক কারিগরি ডিগ্রিগুলোয় গড় পাসের হার ছিল ৮০ শতাংশ।

এর আগের শিক্ষাবর্ষেও ৬ হাজার ৪৭৫ জন এমবিবিএস পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেন ৩ হাজার ৮৩২ জন। ওই শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাসের হার ছিল ৫৯ শতাংশ। যেখানে স্নাতক সম্মানের ডিগ্রিগুলোয় পাসের হার ছিল ৭৫ শতাংশ। কারিগরি স্নাতক পর্যায়ের ডিগ্রিগুলোয় এ হার ছিল ৭৬ শতাংশ।

২০১৬ থেকে ২০১৮— প্রতি শিক্ষাবর্ষেই এমবিবিএস পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৬ শতাংশ করে। যদিও একই শিক্ষাবর্ষগুলোয় স্নাতক সম্মান ও স্নাতক কারিগরি পর্যায়ের ডিগ্রিগুলোয় গড় পাসের হার ছিল ৮০ শতাংশের ওপরে।

চিকিৎসাবিদ্যায় ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি বা এমবিবিএস পেশাগত স্নাতক ডিগ্রি। সাধারণত কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোয় প্রায় একই শিক্ষাক্রমে এ ডিগ্রি দেয়া হয়। ব্যাচেলর অব মেডিসিন ও ব্যাচেলর অব সার্জারি দুটি ডিগ্রির সমন্বয়ে এমবিবিএস ডিগ্রি। পাঁচ বছর মেয়াদি এ ডিগ্রি মূল শিক্ষাক্রমের পর একটি নির্ধারিত মেয়াদে বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষানবিশ হিসেবে প্রশিক্ষণ নিতে হয়, যার মেয়াদ এক বছর।

শিক্ষানবিশ হিসেবে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করার পর বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) চিকিৎসকের নিবন্ধন দিলেই কেবল তিনি চিকিৎসক হিসেবে পেশাগত দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত হন। দেশের প্রতিটি সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের কোনো না কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এমবিবিএস ডিগ্রি প্রদান করে। বিএমডিসির পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আয়োজন করে।

স্বাস্থ্যশিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেডিকেল শিক্ষার পাঠ্যক্রমের ব্যাপ্তি অন্যান্য স্নাতক ডিগ্রির চেয়ে বেশি। সাধারণত বিভিন্ন ডিগ্রির মধ্যে কোনো কোনো বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ, বেশি গুরুত্বপূর্ণ অথবা কম গুরুত্বপূর্ণ এমন ভাগ করা গেলেও এমবিবিএস কোর্সের ক্ষেত্রে আলাদা করা যায় না। প্রতিটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। 

বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আরমান হোসেন বলেন, পদ্ধতিগতভাবে মেডিকেল শিক্ষা অন্যান্য শিক্ষার চেয়ে বেশ আলাদা, কিছুটা কঠিনও। তবে পাসের হার কম হলেও তা বেশি খারাপ নয়। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোয় প্রায় একই পাঠ্যক্রমে এমবিবিএস ডিগ্রি দেয়া হয়।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, মেডিকেলের পড়াশোনা সাধারণত কিছুটা কঠিন। ধারাবাহিক বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় নির্দিষ্ট নম্বর পেয়ে কৃতকার্য হলেই ডিগ্রি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না পারলে ডিগ্রি অর্জনে প্রভাব পড়ে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence