মেডিকেল শিক্ষার্থীরা শুধু বই পোকা নয়, তারা চাইলে সবকিছু করতে পারে

ঢামেকের ব্যাচ ডে

ঢামেকের ব্যাচ ডে
ঢামেকের ব্যাচ ডে  © টিডিসি ফটো

সকালের সোনালি রোদে ঝলমল করছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ক্যাম্পাস। এখানে এক ভিন্ন উৎসবের আমেজ—কালার ফেস্ট! চারপাশ যেন রঙের ছোঁয়ায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। প্রতিদিনের সাদা অ্যাপ্রন আর গম্ভীর পরিবেশের মাঝেও এই দিনটি যেন এক টুকরো স্বপ্নের মতো, ক্লান্ত মনকে রঙিন করে তোলার এক অনন্য উপলক্ষ।

আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢামেক ক্যাম্পাসে ঐশ্বর্যিক ৮১ ব্যচ শিক্ষার্থীরা দিনভর এমন ‘ব্যাচ ডে’ এর উৎসব আয়োজন করে।

কলেজ গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল এক পরিচিত মুখ—হাস্যোজ্জ্বল আকিব। সদ্য ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, ব্যাচ ৮১-এর প্রতিনিধি। তার চোখেমুখে উচ্ছ্বাস, যেন নতুন এক আবিষ্কারের আনন্দ। চারদিকে রঙের ছটা, উল্লাস, সঙ্গীত, আর বন্ধুদের হৈ-হুল্লোড়—সব মিলিয়ে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হচ্ছিল না যে এটি সেই চিরচেনা, নিয়ম-কানুনে বাঁধা মেডিকেল ক্যাম্পাস।

আকিব বলেন, একজন চিকিৎসক কেবল বইয়ের পাতায় আবদ্ধ নন। সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা দেখাতে চাই, ডাক্তাররা শুধু বই পোকাই নয়—আমরা চাইলে বিশ্বমঞ্চে যে কোনো ক্ষেত্রেই নিজেদের মেধা ও সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারি। 

তিনি বলেন, আজকের এই উৎসব শুধু রঙের খেলা নয়, এটি এক মুহূর্তের জন্য হলেও আমাদের বের করে এনেছে পাঠাগার আর ওটি কমপ্লেক্সের চৌহদ্দি থেকে—নিয়ে এসেছে রঙ, হাসি আর সৃষ্টির এক মুক্ত আকাশে।

আকিব আরও বলেন, আজ আমাদের ব্যাচ ডে—এক বিশেষ দিন, যেটা ঘিরে উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর উৎসবের আবহ। দিনের শুরুতেই থাকছে প্রাণবন্ত ফ্ল্যাশমব, যার রঙিন ছন্দে প্রাণ খুলে নাচবে সবাই। এর সঙ্গে হালকা কালার ফেস্ট-এর আয়োজন, যেখানে রঙের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে পুরো ক্যাম্পাস।

আয়োজকরা জানান, বিকেলের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। এই আয়োজনে তাদের ব্যাচের সকল শিক্ষার্থী, প্রিয় সিনিয়ররা এবং শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যার পর একে একে মঞ্চ মাতিয়ে তুলে নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি ও গান। আর রাতের শেষ আকর্ষণ— ব্যান্ডের সংগীত পরিবেশনা। যেখানে সুরের মূর্ছনায় জমে উঠবে পুরো আয়োজন।

তারা বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত প্রবল চাপের মধ্যে থাকি—অধ্যয়ন, পরীক্ষা, ক্লাস, লেকচার—এসবের ভার আমাদের প্রতিদিনই বহন করতে হয়। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় আমাদের ছুটিও কিছুটা কম, তাই বিশ্রাম কিংবা বিনোদনের সুযোগও সীমিত। এমন উৎসবমুখর পরিবেশ আমাদের জীবনে খুব বেশি আসে না—বছরে হয়তো এক-দুইবার। এর আগে ফাল্গুন উৎসব হয়েছিল, যেখানে আমরা রঙ, গান আর আনন্দে মেতে উঠেছিলাম।

এমন আয়োজনের মধ্যেও আমরা সর্বদা চেষ্টা করি যেন হাসপাতালের রোগীদের কোনো অসুবিধা না হয়। যেহেতু ইমারজেন্সি গেট কাছাকাছি, তাই আমরা সতর্ক—তারা যোগ করেন।

শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, হাসপাতালের পরিবেশ সবসময়ই এক ধরনের স্থিরতা আর ভারি অনুভূতি বহন করে। এখানে অসুস্থতা, রোগ, যন্ত্রণা আর মৃত্যুর ছায়া লেগে থাকে, যা এক বিষণ্ণ আবহ তৈরি করে। কিন্তু সেই আবহের মাঝেও আমরা চাই একটুখানি প্রাণের ছোঁয়া। আমাদের এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যই হলো—গম্ভীর, চাপা পরিবেশের মাঝেও একটুখানি হাসি, রঙ, সুর আর আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া।


সর্বশেষ সংবাদ