পড়াশোনায় ধীর কিন্তু নিয়মিত, বিজেএস পরীক্ষায় ৩য় ঢাবির জ্যোতি
চতুর্দশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে সহকারী জজ হিসেবে মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন কুড়িগ্রামের মেয়ে ইসরাত জাহান জ্যোতি। তার জন্ম কুড়িগ্রামের সদর উপজেলায়। বাবা মো. বাদল আহমেদ ও মা ফিরোজা আহমেদ।
২০১২ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সদ্য ঘোষিত (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন জ্যোতি। বিজেএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন, পরামর্শ ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে। তার কথাগুলো শুনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রিফাত হক
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার শৈশবের বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা কুড়িগ্রাম শহরেই। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান আমি। বাবা ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। আমরা তিন বোন। আমি সবার বড়। এর পরের জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে অধ্যায়নরত। ছোটবোন এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আমি কুড়িগ্রাম সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং কুড়িগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্কুল-কলেজে সফলতার হাতছানি কেমন ছিল?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: একদম ছোটবেলায় মিডিয়াম ক্যাটাগরির স্টুডেন্ট ছিলাম। পরবর্তীতে ইমপ্রুভ করা শুরু করি। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষাতেই জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এটা আপনার কততম বিজেএস পরীক্ষা ছিল?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: প্রথম। এর আগের সার্কুলার যখন হয় তখন আমার মাস্টার্স চলছিল। দুটো চাপ একসাথে নিতে পারবো না বলে তখন আমি আবেদন পর্যন্ত করিনি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ হওয়ার স্বপ্ন কবে থেকে দেখেছেন?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এই স্বপ্ন দেখা শুরু।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি
ইসরাত জাহান জ্যোতি: আমার পরিবার সবসময় আমার পাশে ছিলো। সে হিসেবে আমার কোন প্রতিবন্ধকতা পার হতে হয় নাই। কিন্তু পরিবার-পরিজন ছেড়ে ঢাকা এসে নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে চলতে যেয়ে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীর মত আমিও সংগ্রাম করেছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্বপ্ন পূরণের প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন, এক্ষেত্রে পড়াশোনার রুটিন কেমন ছিল
ইসরাত জাহান জ্যোতি: আমি পড়াশোনার ক্ষেত্রে খুব ধীর, কিন্তু নিয়মিত। আমার সেই অর্থে কোন রুটিন ছিলো না। আমি দীর্ঘক্ষণ না বুঝে পড়ার চেয়ে অল্প সময় বুঝে বুঝে পড়াকে সমর্থন করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এমন সাফল্যের পেছনে আপনার অনুপ্রেরণা কি ছিল
ইসরাত জাহান জ্যোতি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ভর্তি হওয়ার পর মা বাবার ইচ্ছা মেয়ে যেনো জজ হয়। ওদের এই ইচ্ছাটাই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ হতে কার থেকে বেশি সহযোগিতা পেয়েছেন?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: আসলে কাউকে একক কৃতিত্ব দেয়া মুশকিল। অবশ্যই আমার পরিবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের আমার সকল শিক্ষক, আমার স্কুল কলেজের শিক্ষকমণ্ডলী, আমার বন্ধু-বান্ধব সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
আরও পড়ুন: জীবনে বিসিএসই সব নয়
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ হওয়ার আগে ও পরে আশেপাশের মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: আমি আমার আশেপাশের মানুষদের চোখেমুখে যে আনন্দের ছাপ দেখতে পেয়েছি তা আমাকে পরিতৃপ্ত করেছে। আমি কতটা খুশি হয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুনরা বিজেএস প্রিলির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: বিজেএস পরীক্ষায় একটা লম্বা প্রস্তুতির বিষয় থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পঠিত বিষয়গুলো থেকে আইন বিষয়ক সব প্রশ্ন আসে। তাই শুরু থেকে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেব। আর এই লম্বা পথচলায় সবচেয়ে দরকারী জিনিস হলো মনোবল। মনোবল নিয়ে লেগে থাকলে সফল হওয়া সম্ভব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রিলি শেষ করার পর বিজেএস লিখিত প্রস্তুতি নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?
ইসরাত জাহান জ্যোতি: আমার একটাই পরামর্শ হলো মনোবল ঠিক রাখা। একটানা ১০টা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অনেকে মনোবল হারিয়ে ফেলে। আর একটা বিষয় বলব কাউকে অনুসরণ করার চেয়ে নিজের পথ নিজে ঠিক করা। একেকজনের দক্ষতা একেক পর্যায়ের। সে অনুযায়ী কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস ভাইবার প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হয়
ইসরাত জাহান জ্যোতি: প্রিলিমিনারী এবং লিখিত পরীক্ষার সাথে ভাইভার অত বেশি পার্থক্য নেই। ভাইভাতে টু দ্য পয়েন্ট উত্তর দিতে হয়। এইক্ষেত্রে সাহস এবং মনোবল অত্যন্ত জরুরী। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে ভাইভাতে সকল প্রশ্নের উত্তর জানার চেয়ে আপনার উপস্থাপনা, ব্যক্তিত্ব, মনোবল আপনাকে এগিয়ে দেবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন সহকারী জজ হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি
ইসরাত জাহান জ্যোতি: সহকারী জজ হিসেবে মনোনীত হওয়া একটা লম্বা পথচলার সূচনা মাত্র। এই পথচলায় আমার সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা এবং যোগ্যতা দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবার চেষ্টা করব।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
ইসরাত জাহান জ্যোতি: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভ কামনা রইলো।