‘ঘড়ির দিকে না তাকিয়ে পড়া’ মুনিয়া চান্স পেলেন ঢাবিসহ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ ইউনিটে

মুনিয়া জাহান
মুনিয়া জাহান  © টিডিসি সম্পাদিত

বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী মুনিয়া জাহান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৬১তম স্থান (মানবিক বিভাগ) অধিকার করেন। পরীক্ষায় নিজের সাফল্যের গল্প নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন—আমান উল্যাহ আলভী। 

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আপনার অনুপ্রেরণা কি ছিল?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতাম স্কুলে থাকতেই। এজন্য ইন্টারে উঠে মানবিকে ভর্তি হই। কলেজ থেকে টুকটাক প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি। একটা জেদ কাজ করত আমার ভেতর, আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। একটু একটু করে এভাবে আগাতম। এইচএসসি শেষ হওয়ার পরই আমি পুরোপুরি এডমিশনের পড়ায় মনোযোগী হই। প্রতিদিনকার পড়াগুলো প্রতিদিনই শেষ করার টার্গেট নিতাম। 

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (মানবিক) ‘গ’ ইউনিটে ৬১তম, ‘বি’ ইউনিটে ৯৫তম, ‘এ’ ইউনিটে ১১৩তম স্থান অর্জন করেছি। এছাড়াও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের এফএএসএস ইউনিটে ৯৩তম, এফএসএসএস ইউনিটে ২৩তম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ‘সি’ ইউনিটে ২৭তম হয়েছি।

প্রস্তুতিকালীন সময়ে কীভাবে পড়ালেখা করতেন?
ঘড়ি বা সময় দেখে পড়তাম না। আমার পড়া শেষ হতে যতক্ষণ লাগত পড়তে থাকতাম। যত বেশি পরিশ্রম করতাম তত বেশি ডিপ্রেসড ও থাকতাম। এই ভেবে যে এত এত কষ্ট যদি বিফলে যায়! সব শেষে যদি স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়! তাও থেমে থাকিনি। গতি অব্যাহত রেখেছিলাম। কোচিং এ নিয়মিত ছিলাম। সকল ক্লাস এবং পরীক্ষা গুলো দিয়েছিলাম। এতে আমার পড়া জিনিসগুলোর উপর একটা আয়ত্ত আসে। রিটেনটাও শুরু থেকেই প্র্যাকটিস করতাম। এভাবে এমসিকিউ আর রিটেনের প্রিপারেশন সমান তালে নিয়েছিলাম।

আরো পড়ুন: ‘ঢাবি তোর জন্য রেখে এসেছি’— বোনের সেই আক্ষেপকে সাফল্যে রূপ দিলেন ভর্তি পরীক্ষায় সেরা হয়ে

পরীক্ষার হলে কীভাবে কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা দিয়েছেন?
পরীক্ষার দিন আসলে সকাল থেকেই নার্ভাস ছিলাম, তেমন ভাবে ভরসা পাচ্ছিলাম না যে, শেষ পর্যন্ত কিছু করতে পারব কি না। এমন অবস্থায়ই হলে যাই এবং পরীক্ষায় বসি। প্রশ্ন সহজ ছিল। কিন্তু এরপরও আমার জানা কিছু প্রশ্নের উত্তর আমি ভুল দাগিয়ে আসি। বাসায় এসে খুব মন খারাপও হয়। নার্ভাসনেসের কারণে এই সমস্যাগুলো হয়। আমি বাসা থেকেই মনস্থির করে গিয়েছিলাম যে এমসিকিউ যাই হোক, আমাকে রিটেনে ভালো করতে হবে। তাই সে অনুযায়ী রিটেনের শুরু থেকে শেষ সবটুকুই লিখে আসি সময়ের ভেতর। অবশেষে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ঢাবিতে ৯৫ তম স্থান অর্জন করতে পেরেছি।

কোন বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? 
শুরু থেকে আমার আইন নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল।  মানবিক থেকে আমার পজিশনে আইন পাওয়ার চান্স একটু কম। তাই আইন না পেলেও ইংরেজির দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। এক্ষেত্রে দুটো সাবজেক্টের দুটো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমার। আইন নিয়ে পড়তে পারলে জজ হওয়ার ইচ্ছা আছে, আর ইংরেজি নিয়ে পড়তে পারলে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা আছে। সর্বোপরি, দেশে থেকে দেশের জনগণের জন্য নিজের শিক্ষাকে সেবায় পরিণত করাই আমার ভবিষ্যৎ পড়াশোনার একমাত্র লক্ষ্য এখন।  

পরবর্তীতে যারা পরীক্ষা দিয়ে তাদের জন্য যদি কিছু বলতেন।
নতুনদের জন্য আমার একটাই উপদেশ, এডমিশনে কমবেশি সবাই পড়ে, কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে সেটার বাস্তবায়ন ঠিক ভাবে করে আসতে পারে না। এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে, মাইন্ডসেট করতে হবে। নার্ভাস হওয়া যাবে না। খুব বেশি কঠিন করে পড়ার প্রয়োজন নেই আসলে, এটা আমাদের মনে হয় ঢাবি হয়ত খুব কঠিন বা ইউনিক কিছু দিবে। কিন্তু তেমনটা না আসলে, আমাদের চেনা জানা টপিক থেকেই প্রশ্ন করা হয়। তাই বারবার টপিকগুলো রিভিশনে রাখতে হবে আর প্র্যাকটিস করতে হবে। সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণে রেখে স্বপ্ন জয়ে এডমিশন সময়ের প্রতিটা দিনই পড়াশোনায় সচেষ্ট থাকতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ