‘ইউআইইউ’র অর্থনীতি বিভাগ শিক্ষার্থীদের দক্ষ করতে সময়োপযোগী কাজগুলো করবে’

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক।  © টিডিসি ফটো

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে দেশ-বিদেশে উচ্চতর গবেষণা করেছেন। এর মধ্যে—অর্থনীতির ইতিহাস, সামাজিক অর্থনীতি এবং ইসলামিক অর্থনীতিসহ--একই বিষয়ের আরও পাঁচটি বড় দিক নিয়ে। বর্তমানে গুণী এই শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হিসেবে। সম্প্রতি তিনি বিভাগটির পড়াশোনার মান, গবেষণার সুযোগ, শিক্ষার পরিবেশসহ নানা বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। গল্প-আলাপে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরেছেন সংবাদ মাধ্যমটির নিজস্ব প্রতিবেদক খাঁন মুহাম্মদ মামুন

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কেন শিক্ষার্থীরা ইউআইইউ’র ইকোনোমিক ডিপার্টমেন্টকে বেছে নেবে?
ড. মো. ওমর ফারুক: দেশের সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। সরকারিতে সুযোগ-সুবিধা বেশি, ফলে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই সেখানে যাচ্ছে। এর বাইরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যারা ভালো করছে, সেখানেও শিক্ষার্থীরা আসছে। যেমন ইউআইইউ, এখানে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ। রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসও শিক্ষার্থীদের এগিয়ে রাখবে। এছাড়াও এখানে শিক্ষার্থীদের যে ধরনের ‘অ্যাটেনশন’ আমরা দিতে পারি—তা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।

আরও পড়ুন: দক্ষ ও কল্যাণমুখী আগামীর জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছে ইউআইইউ’র অর্থনীতি বিভাগ

আমাদের সেরা শিক্ষকরা আছেন, যাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁদের গবেষণার হাতকে শাণিত করতে পারে এবং উচ্চতর পর্যায়ে লেখাপড়ার জন্য পাবলিকেশন্সও করতে পারে। আমি আশা করবো, যাদের ‘পোটেনশিয়াল’ আছে, তারা যেন পূর্নভাবে বিকশিত হতে পারে। যারা অর্থনীতিকে সাবজেক্ট হিসেবে পছন্দ করেন, প্রাসঙ্গিক মেধা আছে, পরিশ্রম করতে প্রস্তুত এবং সামনে অর্থনীতিকেন্দ্রিক ভালো কিছু করতে চান, তাঁদের চয়েসের তালিকায় অবশ্যই ইউআইইউ'র ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্ট থাকা উচিৎ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের কোর্স-কারিকুলাম কতটুকু আপডেট করা হয়?
ড. মো. ওমর ফারুক: আমরা প্রতিনিয়ত এগুলো হালনাগাদ করার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে সময়ের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের যেসব দক্ষতা বাড়ানো দরকার এবং তার জন্য যা করা দরকার, আমরা তা করছি। এখানে আমরা ইউরোপ, নর্থ আমেরিকান এবং উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোয়  যেমন পড়ানো হয়, তা দেশীয় প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিয়মিত সংযুক্ত করা হচ্ছে, যাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেক বেশি সময়োপযোগী হতে পারে, তাঁদের দক্ষতা বাজার উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে পারে এবং তাঁদের অবদান দেশ ও মানুষের কল্যাণে কার্যকরীভাবে লাগতে পারে।

এছাড়া অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আমরা কিছু প্রোগাম যোগ করতে যাচ্ছি, যা হয়তো বাংলাদেশে অর্থনীতি কারিকুলামের ক্ষেত্রে পথিকৃত ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় জোর দিতে চাই এবং শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়ার কোলাবোরেশানের কথা বলা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে এখানে ঘাটতি কোথায়? 
ড. মো. ওমর ফারুক: এখন ইন্ডাস্ট্রি ভালো গ্র্যাজুয়েট চায়। আবার একাডেমিয়া সে দাবি করে যে, তারা দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছে। কিন্তু, তাদের মধ্যে বেশ ব্যবধান রয়েছে, এটি দূর করা দরকার। তাহলে ভালো মানের কিছু গবেষণা করা সম্ভব হবে আর ভবিষ্যতের কিছু ভালো অর্থনীতিবিদ দেশ পাবে। এখানে আমরা সেই সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন: তরুণদের স্বপ্নের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে সেতুবন্ধন করছে ইউআইইউ’র সিডিআইপি

আমরা বাজারের চাহিদা বুঝতে চেষ্টা করছি, সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দক্ষ করতে কাজ করছি। এটি তাদের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। এখানে ইন্ডাস্ট্রিকে তার চাহিদা জানাতে হবে আর একাডেমিয়াকে সে চাহিদা অনুধাবন করে কাজ করতে হবে—সমন্বয় করতে হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখানে শিক্ষার্থীরা কতটুকু হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পান?
ড. মো. ওমর ফারুক: আমরা এখানে শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলো দিতে চাই। তাদের কোনো নির্দিষ্ট কোর্স বা পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। শিক্ষার্থীদের আমরা বিভিন্ন প্রজেক্ট, থিসিসসহ বিবিধ শিক্ষাসম্পূরক কার্যক্রম দিয়ে থাকি—যেখানে তারা বাস্তবভিত্তিক শিখনগুলো উপলব্ধি করার সুযোগ পান। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা এখানে অর্থনীতির বিষয়গুলো বাস্তবিক অর্থেই শেখার সুযোগ পান এবং নিজেকে আগামীর জন্য যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইউআইইউ’র ইকোনোমিক্স ডিপার্টমেন্ট নিয়ে আপনার আগামীর পরিকল্পনাগুলো কী কী?
ড. মো. ওমর ফারুক: প্রথমত, আমরা কারিকুলামগুলোকে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে হালনাগাদ করার চেষ্টা করছি। দ্বিতীয়ত, আমরা এখানে আরও কিছু ভিন্ন ধরনের সময়োপযোগী কাজ করতে চাই। যেমন—ডাটা সাইন্সের সাথে সম্পৃক্ত করে আপডেটেড কিছু কারিকুলাম চালু করা। ডিটিটাল বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে এসব পরিবর্তন অপরিহার্য।

আরও পড়ুন: নবায়নযোগ্য জ্বালানি গবেষণার বাতিঘর ইউআইইউ’র সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চ

তৃতীয়ত, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ঘিরে ‘থিংক ট্যাংক’ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে চাই, যেটি বাংলাদেশের ‘পলিসি মেকিংয়ে’ নতুন ধরনের ধারণাগুলো উপস্থাপন করবে এবং বাংলাদেশের জাতীয় পরিচিতির ও ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের গবেষণা ও চিন্তাশক্তিকে ভালোভাবে বিকশিত করবে। এটি করা গেলে বাংলাদেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হবে—বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য। কারণ, বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিছক পাঠ্যবই আর ক্লাসের মধ্যে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমান সময়ে তরুণদের মধ্যে কোনো দক্ষতার ঘাটতি উপলব্ধি করছেন কি-না? তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
ড. মো. ওমর ফারুক: আমাদের তরুণরা অসাধ্যকে সাধন করতে পারেন। তারা এই সময়ে সেরা একটি কাজ করেছে। এখন তাদের বুঝতে হবে—কোথায় থাকতে হবে; কী করতে হবে, আর কী করা যাবে না—এগুলো তাদের মনে রাখতে হবে। এখন আমরা একটি বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমরা যে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখি—তা পূরনে তরুণদের আরও সততা ও যোগ্যতার সাথে বেশি কাজ করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ